নেতৃত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বাস্তবতা

নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা কিভাবে একটি জাতির উন্নয়ন বা পতনের কারণ হতে পারে, তা আজকের বিশ্বের প্রতিটি কোণে দৃশ্যমান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের সাথে সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার আরও জটিল ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এই লেখায় আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নেতৃত্ব, ক্ষমতা, এবং রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে সম্পর্ক ও সংঘাত নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো।

যেখানে থাকা উচিত সেখানে থাকুন

অনেক সময় কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এমন কাজ বা দায়িত্ব গ্রহণ করে যা তাদের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার বাইরের। বাংলাদেশের সফল মানুষদের অনেকেই তাদের সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতাগুলো উপেক্ষা করে এমন দায়িত্ব বা কাজ গ্রহণ করেন, যা তাদের পরবর্তী সময়ে সমস্যা ও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। কোনো কাজ করতে যাওয়ার আগে তা ভালোভাবে শেখা এবং বুঝে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে ব্যর্থতার দায়ভার বহন করতে হয়, যা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ছাত্র-আন্দোলনগুলোর সমন্বয়কারীরা রাজনীতি করার ইচ্ছা না থাকলেও ক্ষমতার ব্যবহার করতে চান। ক্ষমতার কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া এই ধরনের দায়িত্বশীল পদগুলোতে থাকার ফলস্বরূপ তারা বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে পড়বে। লার্জ অর্গানাইজেশানের সিস্টেম বোঝা ছাড়াই কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব অনেক গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।

ক্ষমতা থাকা মানে দায়িত্বও বহন করা। কিন্তু আমাদের বর্তমান বাস্তবতায়, দায়িত্বহীনভাবে ক্ষমতার ব্যবহার করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা থেকে অনেক সময় বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত আসে, যা পুরো সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে।

ফ্যাশিজমের প্রভাব

সাংবাদিকতা / ইনফ্লুয়েন্সার/  পাবলিক ফিগার হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারকে সহজ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে অনেকে, কিন্তু বাস্তবে তা দেশের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফ্যাশিজমের মাধ্যমে মানুষ যেন তাদের দুর্বলতা ঢেকে রাখতে পারে, এবং একটি মোহময় রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারা তৈরি করে।

নেতৃত্বের গুরুত্ব ও সততা

একজন প্রকৃত নেতা ও ক্ষমতাধর ব্যক্তির উচিত তার নৈতিকতা, সততা এবং দায়িত্ববোধের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। তাবিজ বা বাহ্যিক প্রতীকী শক্তির উপর নির্ভর না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একজন নেতার মূল গুণ হওয়া উচিত। নেতৃত্ব শুধু ক্ষমতা নয়, বরং দায়িত্ববোধ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা।

রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও সঠিক নেতৃত্বের অভাব

বাংলাদেশের সমন্বয়কারীদের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে যে, তারা দায়িত্ব ছাড়াই ক্ষমতা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা শত্রু তৈরি করছেন এবং ভবিষ্যতে নিজেদের উপরই সমস্ত দায়ভার এসে পড়বে। বর্তমান সরকারকে রেসপেক্ট করা হলেও, এই রেসপেক্ট এক সময় ফুরিয়ে যাবে যদি তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হয়। জনগণের সমর্থন লাভ করাটা যেমন কঠিন, ঠিক তেমনই সেটা ধরে রাখাও আরও কঠিন। 

নেতৃত্বের দায়িত্ব ও সম্ভাবনা

নেতৃত্ব এমন একটি ক্ষমতা যা অনেক দায়িত্ব নিয়ে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা প্রায়শই দেখি, ক্ষমতাসীনরা দায়িত্বহীনভাবে এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ক্ষমতাকে ধরে রাখা এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করা—এই দুটোই নেতৃত্বের গুণাবলী। বাংলাদেশের নেতাদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া উচিত। একদিন হয়তো তারা বুঝতে পারবেন যে, নেতৃত্ব মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার নয়; বরং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতৃত্ব, ক্ষমতা, এবং রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে যে সমন্বয় থাকা উচিত, তা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বহীন নেতৃত্বের কারণে আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে সমস্যাগুলো দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। ক্ষমতা ও নেতৃত্বের নৈতিক ব্যবহার আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হতে হবে, না হলে দেশের ভবিষ্যত আরো অস্থির হয়ে উঠবে। Bob Dylan-এর উক্তিটি আমাদের একটি শিক্ষণীয় বার্তা দেয়—"যেখানে থাকা উচিত নয়, সেখানে কখনোই থাকা উচিত নয়।"


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post