প্রিয় পাঠক, বিশ্ব ভ্রৌমান্ড সৃষ্টির পূর্বে
এক মাত্র সৃষ্টি কর্তা ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর আপনার রব ইচ্ছে করলেন
বিশ্ব-ভ্রৌমান্ড সৃষ্টি করার। সৃষ্টির সেরা সব সৃষ্টির মাঝে মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর,
সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান এবং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। মানুষকে এ শ্রেষ্ঠত্ব
দানের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন
‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের
বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টবস্তুর ওপর
শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ’ (বনি ইসরাইল-৭০)।
সৃষ্টিকুলের পরিমাণ অসংখ্য-অগণিত। লোকেরা
বলে, আল্লাহ সর্বমোট ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন এই কথার সঠিক কোন বৃত্তি নেই।
আপনার রব জল ও স্থলভাগের সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষ কে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে তৈরি
করেছেন।আপনার রব্ব আপনাকে সবকিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,
‘আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছি’। (সুরা তীন-৪)।
অন্য কোন কিছু সৃষ্টি করা আপনার রবের উদ্যেশ্য ছিল না; বরং মানুষকে সৃষ্টি
করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তাই মানবজাতি হচ্ছে আল্লাহতায়ালার মূল লক্ষ্যবস্তু। আশরাফুল
মাখলুকাত মানুষকে সৃষ্টি করার আগেই তাদের বসবাসের জন্য এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের
জন্যই চাঁদ, সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, আগুন পানি এবং আলো-বাতাস সহ
সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণার্থে
আনুষঙ্গিক সবকিছুকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। চন্দ্র-সূর্যের
নমুনা রূপে মানুষকে দুটি চক্ষুদান করেছেন। এই চন্দ্র-সূর্য না থাকলে শুধু চোখ দ্বারা
দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
আপনি
সৃষ্টির সেরা হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট
কোনো দিন কোনো দরখাস্ত করেননি। কোনো প্রকার আবেদন-নিবেদন এবং দরখাস্ত ছাড়াই
রব আপনাকে তাঁর সব ধরনের নেয়ামত দান করেছেন। তিনি আপনাকে বসবাসের উপযোগী বাসস্থানের
ব্যবস্থা করেছেন, আপনাকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সব ধরনের রিজিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষের প্রতি আল্লাহ এই সীমাহীন অনুগ্রহ প্রদর্শন সত্ত্বেও
মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নাশুকরি করে। অন্য কোনো সৃষ্টি এভাবে আল্লাহর নাশুকরি করে
না। হায় আফসোস তাদের জন্য যারা অহংকার এবং দাম্ভিকতা সহিত আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাস
করেনা।
আপনার রব আপনাকে বাকশক্তি সহ অসংখ্য নেয়ামত
দান করেছেন। সুস্থ-সবল ও সুঠাম শরীর দান করেছেন। এতদসত্ত্বেও যদি আপনি কথা বলতে না
পারতেন, তাহলে দুঃখের সীমা থাকবেনা। আপনার রব আপনাকে দয়া করে বাকশক্তি দান করেছেন,
কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি কথা বলতে না পারে, তবে তার মতো দুঃখী
মানুষ দুনিয়ায় আর কেউ নেই। এই বাকশক্তি কোনো দোকানে বিক্রি হয় না। টাকা-পয়সায় কিনতে
পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সব মানুষ মিলেও কাউকে বাকশক্তি দান করতে পারবে না। এটা একমাত্র
রবের দান; মানুষের প্রতি তিনি অসীম অনুগ্রহ দান করেছেন।
রব আপনাকে আরেকটি মহা নেয়ামত দান করেছেন।
তা হলো দৃষ্টিশক্তি। উদ্দেশ্য হলো, যেন আমরা আসমান-জমিনকে দেখে আল্লাহর কুদরত নিয়ে
চিন্তা করি। নিজের শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে গবেষণা করে রবের অনুগ্রহের কথা
স্বীকার করি, অর্থাৎ মনে-মনে এ কথা চিন্তা করি যে, দৃষ্টিশক্তি তো আমার নিজের সৃষ্টি
নয়, কোনো দোকানেও পাওয়া যায় না, কোনো গুদামেও সংরক্ষিত থাকে না, আমরা তা কোথা থেকে
পেলাম এই যোগ্যতা আমাকে কে দান করল এভাবে ভাবতে ভাবতে আমাদের অন্তরে এ কথা বুঝে আসে
যে, এই দৃষ্টিশক্তি কোনো বিজ্ঞানীর আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারে সৃষ্টি
হয়নি। এটা কোনো পণ্ডিত গবেষকের গবেষণার ফলও নয়। অথচ এই দৃষ্টিশক্তি আমারা কারাপ কাজে
ব্যবহার করি, হারাম আসলিল দৃশ্য দেখি। হায় আফসোস তাদের জন্য যারা নিজের দৃষ্টির হেফাজত
করে না। আপনার রব কত মহান আপনাকে,আমাকে কাজ
করার জন্য দুটি হাত দিয়েছেন, শ্রবণ করার জন্য দুটি কান দিয়েছেন, ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য
নাক দিয়েছেন এবং চলার জন্য দুটি পা দান করেছেন, অথচ আমরা তার দয়া বুঝতে পারি না। তার
দেওয়া নেয়ামত কত বাজে কাজে ব্যবহার করি। হায় আফসোস আমার জাতির জন্য যারা মহান রবের
এত নেয়া মত পাওয়ার পরেও রবের শুকরিয়া আদায় করে না। দুনিয়ায় রঙ্গিন চশমা আমাদের মহান
রব সম্পর্কে গাফেল করে দিয়েছে।
আপনার রব আল কোরআনে সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে
খুঁজতে বলেছেন। অথচ আমরা আল কোরআনে স্রষ্টা কি বলেছেন বুজার চেষ্টা করি না। অনেকে মনে
করে আল কোরআন বাংলায় পড়া পাপ, অথচ আপনি আল কোরআন না বুঝতে পারলে কি করে আপনি স্রষ্টার
অস্তিত্ব খুঁজে বের করবেন? সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য যারা সন্ধান করে নিয়ে আসতে পারবে তাদের
কাছেই ধরা দেবেন সৃষ্টিকর্তা। আর এই কাজটা আমাদরে করার জন্য জীবনে কম হলেও ৩ বার বাংলায়
আল কোরআনের অনুবাদ পড়তে হবে। একবার হলেও তর্জমা সহ পড়তে হবে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের
আপনার রব বলেন, ‘হে রাসুল, আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কীভাবে তিনি
সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু
করতে সক্ষম।’ (সুরা আনকাবুত : ২০)
এ আয়াতে মহান রব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মানুষকে
ভাবার কথা বলেছেন। চিন্তার করার কথা বলেছেন। মানুষকে ভাবতে বলেছেন তার সৃষ্টি নিয়ে।
নিশ্চয়ই অজ্ঞদের ঈমানের চেয়ে বিজ্ঞদের ঈমান শক্তিশালী।আর সবচেয়ে বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি
যে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে পারে। যারা সৃষ্টিকর্তাকে বুঝে এবং খুঁজে পায়,
স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাদের ঈমানই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়। তারাই হল
প্রকৃত জ্ঞানী পরহেজগার মুমিন ব্যক্তি। স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবা, চিন্তা করার একমাত্র মাধ্যম
তার সৃষ্টি। পৃথিবীতে ঘুরে ঘুরে সৃষ্টিকে দেখার জন্য আল্লাহ বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সৃষ্টি থেকে উপদেশ গ্রহণের কথা বলেছেন। বলা হয়েছে, ‘তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের
জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে, তাদের পরিণতি
কী হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।’ (সুরা
আলে-ইমরান : ১৩৭-১৩৮)।
কোরআনের এ আয়াতে মানুষকে পৃথিবী ভ্রমণ করতে বলা হয়েছে। ভ্রমণ স্রষ্টার
সৃষ্টি রহস্য জানায়, ভ্রমণ আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, ভ্রমণ জ্ঞানের দোয়ার খুলে দেয়।’ হে প্রিয়”
আপনার ও উচিত বেশি বেশি ভ্রমণের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তাকেও
খুঁজে বেড়ানো। মহান আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান অর্জনের জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর
প্রান্তে সফরের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা এ উদ্দেশ্যে কেন দেশ ভ্রমণ
করেনি যে, তারা জ্ঞানসমৃদ্ধ হৃদয় ও শ্রবণশক্তিসম্পন্ন কানের অধিকারী হতে পারে!’ (সুরা
হজ : ৪৬)