বোরকা ও সাংস্কৃতিক আক্রমণের প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের বাংলাদেশে, যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলিম, ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ নিয়ে বিতর্ক ও আক্রমণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইসলামি পোশাক, বিশেষত নারীদের বোরকা পরা, শুধু ধর্মীয় একটি প্রথা নয় বরং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবুও, বোরকা পরিধানের বিরুদ্ধে যে ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আক্রমণ হচ্ছে, তা আসলেই বিস্ময়কর।

বোরকা এবং নারীর মর্যাদা

ইসলামে নারীকে সর্বদা সম্মানের চোখে দেখা হয়। একজন মুসলিম নারীর মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষার্থে ইসলাম তাদের জন্য বোরকা বা পর্দা প্রথার বিধান দিয়েছে। কিন্তু আজকের আধুনিক সমাজে, যেখানে নারীরা উন্নত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, সেখানে বোরকা পরা নিয়ে একধরনের প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করে, বোরকা একটি প্রাচীন ধ্যানধারণার অংশ, যা আধুনিক যুগে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

 আমরা যদি ভাবি, ২০২৪ সালে এসেও কেন নারীরা বোরকা পড়বে?, তাহলে এটা আসলে মুসলিম নারীদের স্বাধীনতা ও মর্যাদার ওপর আঘাত। ইসলামে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার জন্য বোরকা পরিধান করা হয়, যেখানে নারীদেরকে মণিমুক্তা হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়। এই মণিমুক্তা যেমন সুরক্ষিত থাকে, তেমনই নারীদেরও নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় বোরকা একটি প্রাচীর হিসেবে কাজ করে।

শিল্পকলা ও ইসলাম: সাংস্কৃতিক আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, শিল্পকলা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে একটি কাঠামোগত আক্রমণ চলছে। সৈয়দ যামিল আহমেদ, শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে, ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নাটককে ব্যবহার করার কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্য শুধু একজন ব্যক্তির মতামত নয়, এটি আসলে একদল সাংস্কৃতিক জমিদার শ্রেণীর প্রতিফলন, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে নানা সাংস্কৃতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে মুসলমানদের সামাজিকভাবে কোণঠাসা করতে চায়।

এই শ্রেণী ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য শিল্পকে ব্যবহার করে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো মুসলমানদের ধর্মীয় প্রথা ও মূল্যবোধকে সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। পর্দানশীন মুসলিম নারীদের ওপর যে বৈষম্য আরোপ করা হয়, তা তাদের বোরকা খুলে ফেলার একটি অবচেতন প্রচেষ্টা।

ইসলামবিদ্বেষ ও সমাজের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে এই ধরনের আক্রমণ নতুন কিছু নয়। দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে ইসলামের ওপর আক্রমণ করে আসছে কিছু শ্রেণী, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক মনোভাব পোষণ করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলাম পালনকে সামাজিকভাবে অসম্মানিত এবং অবমূল্যায়িত করা।

এই প্রবণতা শুধু বোরকা পরিধানের বিরুদ্ধে নয়, বরং ওয়াজ-মাহফিলের মতো ইসলামের অন্য প্রধান উৎসব ও প্রথাগুলোর প্রতিও লক্ষ্য করে। ওয়াজ-মাহফিলকে বাদ দিয়ে মুসলিম সমাজকে মূলধারার সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে, মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা পরিধান করা ক্রমশই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ এটি সমাজে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে, পর্দা হল একটি প্রাচীন এবং অগ্রহণযোগ্য প্রথা।

সাংস্কৃতিক জমিদার শ্রেণী: ইসলামের বিরুদ্ধে হেজেমনিক প্রকল্প

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জমিদার শ্রেণী, যারা কলোনিয়াল মাস্টার এবং পশ্চিমা জাতীয়তাবাদের দ্বারা প্রভাবিত, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি হেজেমনিক প্রকল্প পরিচালনা করছে। তারা ইসলামের চিহ্নগুলোকে সমাজ থেকে মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এই আক্রমণ শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের অংশ।

তাদের উদ্দেশ্য হলো ইসলাম পালনকে সামাজিকভাবে মার্জিনালাইযড করা এবং মুসলিম পরিচয়কে সমাজের বাইরে ঠেলে দেওয়া। এই শ্রেণী মনে করে যে, পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে একজন মুসলিম নারীকে আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য করা যাবে না।

বোরকা পরা: মুসলিম নারীদের স্বাধীনতা

প্রশ্ন হল, কেন ২০২৪ সালে এসেও নারীরা বোরকা পড়বে? বোরকা একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এবং এটি নারীদের স্বাধীনতার প্রতীক। একজন মুসলিম নারী যদি নিজে থেকে বোরকা পরিধান করতে চান, তবে তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত। বোরকা কোনো বাধ্যবাধকতা নয় বরং এটি একজন নারীর নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আত্ম-সম্মানের প্রতিফলন। সমাজ বা সাংস্কৃতিক জমিদার শ্রেণীর মতামত বা আদর্শের কারণে একটি ধর্মীয় প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়।

ইসলাম ও মুসলিম নারীদের রক্ষা: সমাজের দায়িত্ব

ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যদি কেউ এই আদর্শকে আক্রমণ করতে চায়, তবে আমাদের উচিত সেই আক্রমণের মোকাবেলা করা। ইসলামের শত্রুরা সমাজে বিভেদ ও বিরোধ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এই বিভেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা।

২০২৪ সালে এসে আমাদের সমাজের একাংশ ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ধরনের আক্রমণ চালাচ্ছে, তা স্পষ্টতই ইসলামবিদ্বেষের একটি কাঠামোগত বহিঃপ্রকাশ। বোরকা পরা হোক বা ওয়াজ-মাহফিলে অংশগ্রহণ করা, এটি একজন মুসলিমের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমাদের উচিত সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।

সমাজে ইসলামের সঠিক চর্চা ও মুসলিম নারীদের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে, আমাদের এই আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। শুধু ইসলাম পালন নয়, বরং ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রথা ও মূল্যবোধকে রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post