আমাদের এ মিছিল অনন্ত কালের দিকে

আমাদের মিছিলের ইতিহাস অনেক গভীর। আমরা একটি অবিচল মিছিলের অংশ, যা শুরু হয়েছে নিকট অতীতের এক মহাকাব্যিক প্রেক্ষাপট থেকে এবং চলমান রয়েছে অনন্ত কালের দিকে। আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে এসে পৌঁছেছি, এমনকি শত সংঘাতের মধ্যেও আমাদের পদযাত্রা থামেনি। এই সংগ্রামের মধ্যে আমরা কি কখনো ভাবতে পেরেছি, কোথায় থামবো? আমরা কি কখনো প্রশ্ন করেছি আমাদের পরিণতি কি? না, আমরা জানি—আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের, আমাদের লক্ষ্যে কোন শেষ নেই।

আমাদের উদয় ও অস্তের ক্লান্তি, আমাদের ভাঙা শরীর, ক্ষত-বিক্ষত রক্তমাখা দেহ, কোন কিছুই আমাদের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বদরের ময়দান থেকে ওহুদের উচ্চাভিলাষ, মূতার মরুপ্রান্তরের সবুজ হওয়া পর্যন্ত, আমরা সেই মিছিলের অংশ যারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে। আমরা যে মিছিলে হাঁটছি, সেই মিছিল কোনদিন থামেনি, থামবেও না। কবি আল মাহমুদ।

বদর থেকে শুরু

বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক অমর অধ্যায়। আমরা জানি, এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শত্রুর সামনে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৩১৩ জন সাহসী যোদ্ধা, যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এই যুদ্ধ আমাদের প্রথম শিক্ষা দেয় যে, সত্যের পথে সংখ্যা কোনো বিষয় নয়, বিশ্বাসই প্রধান। এই বদরের যুদ্ধ আমাদের মিছিলের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করেছে। সেইদিন থেকেই আমাদের পদযাত্রা শুরু হয়েছিল এবং বদরের ময়দান আমাদের বিশ্বাসকে নতুন শক্তি যোগায়।

ওহুদ: সংঘাতের মাঝেও প্রতিজ্ঞা

ওহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা প্রথমবারের মতো বড় ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিল। যদিও শত্রুরা তাদের স্বাভাবিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, তবে আমাদের শিবিরে আঘাত এসেছিল। অনেকেই শহীদ হয়েছিলেন, অনেকেই আহত হয়েছিলেন। কিন্তু এই যুদ্ধে আমাদের যে শিক্ষা হয়েছে, তা হলো: প্রতিকূলতা আমাদের মিছিলকে কখনোই থামাতে পারবে না।

ওহুদ আমাদের দেখিয়েছে, সংগ্রাম চলমান থাকবে, তবে আমাদের লক্ষ্যে ভিন্নতা আসবে না। আমরা জানি, কোনো পরাজয়ই চূড়ান্ত নয় যদি আমরা আমাদের বিশ্বাস ধরে রাখি। আল্লাহর পথে চলতে হলে, সংগ্রাম, ত্যাগ ও পরিশ্রম অপরিহার্য।

মূতা: শহীদের মিছিলে অংশগ্রহণ

মূতার প্রান্তরে, আমাদের মিছিলের আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচিত হয়েছিল। যদিও এই যুদ্ধ ছিল আমাদের সংখ্যা ও সম্পদের তুলনায় অসম যুদ্ধ, তবুও আমাদের যোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে আল্লাহর পথে লড়াই করেন। সেখানে আমাদের রক্তের বিনিময়ে সবুজ হয়ে উঠেছিল মরুপ্রান্তর। আমরা কোনোদিন পিছপা হইনি, হবো না। আমাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে, কিন্তু আমাদের আত্মা সবসময় অবিচল ছিল। শহীদের রক্ত থেকে ফুটে ওঠা এই সংগ্রাম আজও আমাদের মিছিলের চালিকাশক্তি।

আমাদের পতাকা: কালেমা তাইয়্যেবা

আমাদের পতাকা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক—কালেমা তাইয়্যেবা, যা আমাদের জীবনের মূলভিত্তি। এই কালেমা আমাদের বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র, আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের প্রেরণা। এই কালেমা ধারণ করে আমরা আমাদের জীবনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করি। এই কালেমার শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের যাত্রা আল্লাহর নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত চলতেই থাকবে।

আমাদের হাতে একমাত্র গ্রন্থ আল-কুরআন। এই পবিত্র গ্রন্থ আমাদের জীবনের সকল দিকনির্দেশনা দেয়। যখনই আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা বা প্রশ্ন দেখা দেয়, এই গ্রন্থ আমাদের আলোর পথ দেখায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যারা কুরআনের নির্দেশনা মেনে চলেছে, তারা কখনোই থামেনি বা হার মানেনি। আমাদের মিছিলও এই গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে চলমান।

আমরা কোথায় যাচ্ছি?

প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের লক্ষ্য কি? আমাদের গন্তব্য কি একদম নির্দিষ্ট? না, আমাদের গন্তব্য এ পৃথিবীর কোন স্থানে নেই, আমাদের লক্ষ্য এক সোনার তোরণ যা পার্থিব বস্তুর বাইরে। আমরা জানি, এই মিছিল অনন্ত কালের দিকে, যেখানে আমাদের পরিণতি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

আমরা কোনোদিনও থামবো না। আমাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত হলেও আমাদের মনোবল সবসময় অটুট থাকবে। কারণ আমরা জানি, আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া নয়, আমাদের লক্ষ্য হলো সেই মহামূল্যবান জীবনের দিকে যাত্রা করা যা পরকালে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

শহীদের চেহারার ভিন্নতা নেই

আমাদের মিছিলের অংশীদারদের চেহারায় কোন ভিন্নতা নেই। শহীদদের চেহারা, অবস্থান, জাতি, বর্ণ কোন কিছুতেই ভিন্নতা নেই। আমরা এক আত্মা, এক প্রাণ। আমাদের সকলের লক্ষ্য এক, সকলের যাত্রা একই দিকে। আমরা সবাই শাহাদাতের জন্যই মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে আগমন করেছি। তাই আমাদের পথের কণ্টককেও আমরা আলিঙ্গন করতে দ্বিধাবোধ করি না।

এক সোনার তোরণ: আমাদের গন্তব্য

আমাদের মিছিলের লক্ষ্য কোনো পার্থিব সম্পদ নয়, কোনো ক্ষমতা বা মর্যাদা নয়। আমাদের লক্ষ্য এক সোনার তোরণ, যা এই পৃথিবীতে নেই। আমাদের বিশ্বাসে এই তোরণ সেই জান্নাতের প্রতীক, যেখানে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সবাই সেই গন্তব্যের দিকে ছুটছি, যেখানে আমাদের প্রাপ্তি হবে চিরন্তন শান্তি।

সভ্যতার উত্থান-পতনের মধ্যেও আমাদের অবিচল যাত্রা

আমাদের মিছিল পনের শত বছরের ইতিহাসে কখনো থামেনি। পৃথিবীর সভ্যতা যতবারই উঠেছে আর পড়েছে, আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হইনি। আমরা আমাদের সহযোদ্ধাদের মাটির নিচে সমাহিত করেছি, কিন্তু তাদের কবরে আমরা শুনতে পাই ভবিষ্যতের গুন্জন। আমাদের প্রতিটি শহীদের রক্তে ভবিষ্যতের নুতন স্বপ্ন বোনা হয়েছে, যেখানে একটি শান্তিময় পৃথিবীর ভিত্তি রচিত হবে।

আমাদের মিছিলের প্রতিটি পদক্ষেপে শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলমান। শয়তান আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়। আমরা জানি, আল্লাহর পথে চলা কোনো সহজ কাজ নয়, কিন্তু আমরা এই পথে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ভয় ও ধ্বংসের মধ্যেও আমাদের অবিচল যাত্রা

আমাদের মিছিল কোনো ভয় বা ধ্বংসের কাছে মাথা নত করেনি। পৃথিবীর যতই বিপর্যয় আমাদের দিকে আসুক, আমরা সেগুলোকে পাড়ি দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। কারণ আমাদের পতাকা আল্লাহর কালেমা ধারণ করে, যা কোনোদিন কাউকে থামতে দেয়নি। আমরাও থামবো না।

আমাদের মিছিলের যে প্রতিজ্ঞা, তা আজও জ্বলজ্বল করছে। আমাদের মুখমণ্ডলে আগামী ঊষার নরম আলোর ঝলকানি। আমরা জানি, আমাদের এ মিছিল অবিচল থাকবে যতক্ষণ না আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।

আমাদের এ মিছিল কেবল মাত্র একটি দল, গোষ্ঠী বা জাতির নয়, এটি সেই আদর্শের মিছিল, যা আল্লাহর পথে যাত্রা করে। আমাদের মিছিল বদর থেকে শুরু হয়ে ওহুদ, মূতা, এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। শত শত সংঘাতের মধ্যেও আমাদের এ যাত্রা থামেনি। আমরা আল্লাহর পথে যে মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি, তা থামার জন্য নয়। আমাদের এ মিছিল শুধু একটি ইতিহাস নয়, এটি এক চিরন্তন সত্য। আমরা জানি, এই পৃথিবীতে আমাদের লক্ষ্য এক সোনার তোরণ, যা চিরকাল আল্লাহর নৈকট্যের প্রতীক।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post