মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য: বিবেকের শক্তি
মানুষ এবং পশুর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো বিবেক যার কারণে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ হয়েছে। যদিও দেহগতভাবে মানুষ ও পশু প্রায় একই রকম কিন্তু তার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে—দুজনেই ক্ষুধা লাগলে খেতে চায়, পান করতে চায়, আরাম চায়—তবে মানুষকে আল্লাহ বিশেষভাবে বিবেক দিয়েছেন যা অন্য কোন প্রাণীকে দেওয়া হয়নি। এই বিবেকের মাধ্যমেই মানুষ ভালো-মন্দ, আলো-আঁধার চিনতে পারে সে চাইলে ভালো কাজ করতে পারে, সে চাইলে খারাপ কাজ করতে পারে। তাই কুরআনে বলা হয়েছে, যারা এই বিবেক ব্যবহার করেনা, তারা চতুষ্পদ জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট যদিও তাদের দেখতে মানুষের আকৃতির মনে হয়।
সৃষ্টির রহস্য এবং আল্লাহর প্রশ্ন
আমাদের আজকের সুন্দর দেহ আমাদের জন্মের আগে এমন ছিল না বলতে গেলে আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমরা তো ছিলাম এক ফোঁটা পানি, যা রক্তপিণ্ডে, তা থেকে গোশতের টুকরা, এবং অবশেষে এক ছোট্ট দেহে রূপান্তরিত হয়েছি এটা কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়। কিন্তু আজ আমরা যদি দাবী করি যে এই দেহের মালিক আমরাই, তবে আমরা আল্লাহ, সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা এবং নিখুঁত কারিগর, তাকেই অস্বীকার করছি নিজের অজান্তেই সৃষ্টিকর্তাকে রাগান্বিত করেছি। সাড়ে ১৪শত বছরের আগেই আল্লাহ প্রশ্ন করেছেন, "হে মানব জাতি, কীভাবে তোমরা আমাকে অস্বীকার করো,অথচ তোমরা ছিলে মৃত আমি তোমাদের জীবন দান করেছি, কিভাবে আমার হুকুম লঙ্ঘন করো?"
মাখলুক এবং আল্লাহর সম্পর্ক
প্রত্যেক সৃষ্টি আল্লাহর কাছে পরিবারের সদস্যের মতো তিনি প্রতিটা বান্দার সকল প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান করেন এবং প্রতিটা সৃষ্টির খেয়াল রাখেন। যেমনিভাবে মানুষের দুনিয়ায় তার গোত্রের প্রতি টান থাকে,নিজের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তেমনি আল্লাহ তাআলারও মানুষের প্রতি তেমনই টান রয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের নিজ দায়িত্বের উপর ছেড়ে দেননি; বরং তাদের জন্য বিধান আরোপ করেছেন তাদের জীবনধারণের নিয়ম কানুন পবিত্র গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আসমান থেকে কিতাব নাজিল করেছেন এবং নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে তারা মানুষের জন্য নমুনা হিসেবে কাজ করতে পারে। তারপরও মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় বোধ করে আফসোস তাদের জন্য।
দেহের দায়িত্ব এবং আল্লাহর নির্দেশনা
মানুষকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দিয়ে আল্লাহ তাদের জন্য সব কিছু নির্ধারণ করেছেন একটা মানুষ জীবন ধারণের জন্য কি কি প্রয়োজন তিনি সবকিছু খেয়াল রাখেন। যেমন, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হৃদপিণ্ডের উপর নির্ভরশীল। যদি হৃদপিণ্ড ঠিক থাকে, তবে মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ আমাদের বুঝাতে চান, আমাদের সব কিছু আল্লাহর দেওয়া আমানত স্বল্প সময়ের জন্য আমরা সেই নিয়ামত ভোগ করতেছি। তিনি দেখছেন আমরা সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করছি ভালো কাজে ব্যবহার করি নাকি খারাপ কাজে।
জীবনের মূল্য এবং শেষ বিচারের দিন
মায়ের গর্ভ থেকে দুনিয়াতে আসা আর মৃত্যুর মাধ্যমে কবরে চলে যাওয়া, এটাকে জীবনের সমাপ্তি ভাবা ভুল, আমাদের জীবনধারণের জন্য প্রতিদিন খাদ্য যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি পরকালের জন্য ইবাদত করা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের দেখতে চাচ্ছেন কে কীভাবে নিজের জীবন পরিচালিত করছে তাই তিনি আমাদের স্বল্প সময়ের জন্য স্বাধীনতা দিয়েছে। আল্লাহ নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন, "তোমার ইলাহ একজন, ঐ মাবুদ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।"
সৃষ্টিকর্তার শক্তি ও সৃষ্টির বিস্ময়
আল্লাহ আসমান, জমীন এবং পাহাড়কে স্থাপন করে তাঁর শক্তিমত্তা প্রমাণ করেছেন আসমান কে ঝুলিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর মতো লাখ লাখ গ্রহ শূন্য আকারে ঘুরপাক খাচ্ছে, পাহাড়, পর্বত, নদী নালা, সবুজ শস্য শ্যামলা ফসল দিয়ে পৃথিবীকে সাজিয়ে তুলেছেন। তিনি সবকিছু জোড়া জোড়া দিয়ে বানিয়েছেন—সুখকে দুঃখের সাথে, শান্তিকে অশান্তির সাথে। তিনি আসমান থেকে কিতাব নাযিল করেছেন এবং মডেল হিসেবে পাঠিয়েছেন নবী-রাসূলদের যারা আমাদের পথ নিদর্শন।
দীন শেখার প্রয়োজনীয়তা
ধনী বা গরীব, পুরুষ বা মহিলা, শহুরে বা গ্রামীণ, সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের দীন শিখতে হবে যা প্রতিটা মানুষের জন্য ফরজ করা হয়েছে। কারণ আমরা আল্লাহর নিযুক্ত খলিফা আমরা এই পৃথিবীতে মহান আল্লাহর প্রতিনিধিকারী। জীব-জানোয়ার এবং মানুষ দুটিই আল্লাহর সৃষ্টি, তবে মানুষের মধ্যে দীন ও দীনের বিধান রয়েছে যা জানোয়ারের মধ্যে নেই আমাদের জন্য দীন মানা ফরজ করা হয়েছে কিন্তু কোন জন্তু-জানোয়ারের জন্য নয়।
পশুর মতো আচরণ এবং তার পরিণতি
দুনিয়ায় তিন প্রকারের জীবজন্তু রয়েছে। এক প্রকার জীব নিজের পেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যেমন গরু বা ছাগল তাদের কাজ হল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা। তাদের মতো কিছু মানুষও আছে যারা নিজের পেট ভরায় ব্যস্ত। দ্বিতীয় প্রকারের জীব অন্যের ক্ষতি করে নিজেদের পেট ভরায়, যেমন বাঘ-ভল্লুক এরা হলো হিংস্র প্রজাতির। এমন কিছু মানুষও আছে যারা সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করে তারাও ওই ধরনের জন্তুর মতো হিংস্র। তৃতীয় প্রকারের জীব অন্যের ক্ষতি করে নিজে কোনো লাভ না করেও, যেমন সাপ-বিচ্ছু এরা অকারণে অন্যের ক্ষতি করে। মানুষদের মধ্যেও এক শ্রেণী মানুষ আছে যারা ও কারণে অন্যের ক্ষতি করে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদের এ বুনিয়াদের উপর পাঠিয়েছেন—তাদের সকলের উদ্দেশ্য হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
আল্লাহর ন্যায় বিচার এবং পৃথিবীর সংকট
যখন মানুষ তিন প্রকার পশুর মতো হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন বিপর্যয় পাঠান, তাদের উপর বিভিন্ন আজাব বর্ষিত হয়। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, এসব বিপর্যয় মানুষের হাতের কামাই যা আমাদের কর্মফলস্বরূপ পেয়ে থাকি। ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, এবং যদি আমরা আমাদের জীবনে সেগুলোর চর্চা না করি, তবে আমরা জুলুমের কুণ্ডলির মধ্যে পড়ে যাব তাই আমাদের সকলের উচিত এখনি সচেতন হওয়া।