হলুদ মিডিয়ার প্রভাব: মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের নতুন রূপ

আজকের বিশ্বে গণমাধ্যমের প্রভাব অস্বীকার করার মতো নয়,যদি কোন গণমাধ্যম ভুল তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করো আমাদের অবচেতন মন সেটাকে আস্তে আস্তে বিশ্বাস করা শুরু করে। প্রতিদিন আমরা যা দেখি, শুনি, এবং পড়ি তার অনেকটাই গণমাধ্যমের মাধ্যমেই দেশি-বিদেশি খবরা খবর জানতে পারি। তবে, এই গণমাধ্যমের অনবরত প্রচারিত বার্তাগুলি কখনো কখনো আমাদের মন ও মস্তিষ্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলে, যা আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারি না। বিশেষ করে, যখন গণমাধ্যম বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে কাজ করে কোন গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তখন তার প্রভাব হতে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই আজকের এই ব্লগে আলোচনা করব হলুদ সাংবাদিকতা সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের কিভাবে তুচ্ছ করে উপস্থাপন করে! 

মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের উপর সংঘটিত নির্যাতন ও হত্যার খবর প্রায় প্রতিদিনই শিরোনাম হয়। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, এই সব খবর আমাদের মনে কি ধরনের প্রভাব ফেলছে? মিডিয়ার নিরন্তর প্রচারিত একপাক্ষিক বার্তা আমাদের অবচেতন মনের উপর এমনভাবে ছাপ ফেলে যে, আমরা মুসলিমদের জীবনকে অন্যদের তুলনায় কম মূল্যবান মনে করতে শুরু করি, মুসলমানদের হত্যা করা একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন—এইসব অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে আমরা এতটাই স্বাভাবিক মনে করতে শুরু করি যে, কয়েক ডজন মুসলিমের মৃত্যু যেন আমাদের কাছে আর তেমন কোনো তাৎপর্য বহন করে না। অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় হলুদ মিডিয়াতে মুসলমানদের হত্যা করাটা জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে প্রকাশ করা হয় আর এই বিষয়টা আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেই। 

একপাক্ষিক বার্তার বিপদ

মিডিয়ার এ ধরনের একপাক্ষিক বার্তা আমাদের মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং আমাদের মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন মুসলিম নিহত হন, তখন তা মিডিয়ায় খুব একটা গুরুত্ব পায় না। কিন্তু একজন পশ্চিমা নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো বিশ্ব প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। এই বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদেরকে অবচেতনভাবে শিখিয়ে দেয় যে, মুসলিমদের জীবন কম মূল্যবান, আর পশ্চিমাদের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।

মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের প্রভাব

মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন এমন একটি অস্ত্র যা শারীরিক আগ্রাসনের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। যখন গণমাধ্যম প্রতিনিয়ত আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বার্তা দিয়ে যায়, তখন আমরা অবচেতনভাবেই তা মেনে নিতে শুরু করি। যেমন, মুসলিমদের উপর হওয়া অত্যাচারকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানো হয়, আর তাদের প্রতিরোধকে সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা নিজেদের মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি এবং এক সময় আমাদের নিজস্ব পরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।

সচেতনতা বৃদ্ধি ও আত্মরক্ষা

আমাদের উচিত মিডিয়ার এই মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করা। সচেতন থাকতে হবে যে, গণমাধ্যম আমাদের মনের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে এবং কেমন বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের নিজেদের মানসিকতা ও মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। মুসলিমদের জীবন এবং সম্মানকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের প্রতি যে কোনো ধরনের অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।


মিডিয়ার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের মনের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা বুঝতে হবে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের চিন্তা ও মনোভাবকে শুদ্ধ রাখতে হবে, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি জীবন মূল্যবান, এবং কোনোরকম বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post