আমাদের জীবনের অগ্রাধিকার এবং আমরা যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি, তা আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং পরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করে। একটি প্রিয় উক্তি আছে: "আমাদের গুরুত্ব দেয়ার বিষয়গুলো আমাদের প্রাধান্য নির্ধারণ করে এবং প্রাধান্যগুলো আমাদের পথ নির্ধারণ করে।" সহজ কথায়, আপনি কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেন, তা থেকেই বোঝা যায় আপনি কোন দিকে যাচ্ছেন।
যেমন, শার্লক হোমসের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। একবার তিনি একটি মূল্যবান ডকুমেন্ট খুঁজতে এক মহিলার বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিলেন। তার যুক্তি ছিল, বাড়িতে আগুন লাগলে মানুষ প্রথমে সেটি বাঁচানোর চেষ্টা করবে যা তাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। তার ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। আগুন লাগার পর, মহিলা প্রথমে সেই মূল্যবান ডকুমেন্টটি বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
এই ঘটনা থেকে বুঝা যায়, আমরা নিজেদের জীবনে যা মূল্যবান মনে করি, তা-ই রক্ষা করার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করি। যদি আমরা আমাদের সময়, শক্তি, এবং মনোযোগ সবই দুনিয়ার পেছনে ব্যয় করি, তাহলে সেটাই আমাদের জীবনের প্রাধান্য হয়ে দাঁড়ায়। আবার যদি আমরা আমাদের সময় এবং শক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের আদর্শ মেনে চলে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাধান্য হবে।
অর্থনৈতিক জীবনে প্রাধান্য
বাংলাদেশের এক ভাই তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন এই বিষয়টা তিনি উপস্থাপন করেছেন ঠিক এইভাবে: যখন আমি ব্যাংক সার্কুলারের অনুবাদ করতাম। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলো ছিল যথেষ্ট জটিল এবং তাদের অর্থ বের করা অনেক কঠিন ছিল। সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহার করে সার্কুলারগুলোর ইংরেজি অনুবাদ করেছিলাম, কিন্তু আমাদের সিইও প্রাইমারি সোর্সের ওপর জোর দিয়েছিলেন। প্রথমে মেজাজ খারাপ হয়েছিল, কিন্তু পরে বুঝলাম, তার কথায় যুক্তি আছে। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যখন কিছু বলা হয়, তখন তা দায়িত্বের সাথে বলা উচিত, এবং যেকোনো তথ্য প্রদান করার সময়, তা প্রাইমারি সোর্স থেকে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
এটি আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, প্রায়োরিটি এবং গুরুত্বের বিষয়টি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি। যেকোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করি। কারণ এতে আমাদের আর্থিক লাভক্ষতির প্রশ্ন জড়িত থাকে। কিন্তু যখন ইসলামের প্রসঙ্গ আসে, তখন আমরা তেমন গুরুত্ব দিই না। আমরা আমাদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করি না। অথচ আমাদের আখিরাতের জন্য এই বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মীয় জীবনে প্রাধান্য
আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাধান্য এবং গুরুত্বের বিষয়টি দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক বিষয়ে আমরা যেমন গভীরভাবে চিন্তা করি, যাচাই-বাছাই করি, ঠিক তেমনই আমাদের আখিরাতের বিষয়ে করা উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা তা করি না। আমরা দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যতটা চিন্তা করি, ইসলাম এবং আখিরাত নিয়ে ততটা করি না। এ কারণেই আমাদের সমাজে অনেক ধরনের বৈপরীত্য দেখা যায়।
আমাদের উচিত নিজেদের জীবনযাত্রা এবং প্রাধান্য নিয়ে ভাবা। আল্লাহ এবং তার রাসূলের আদেশ এবং নির্দেশনা মেনে চলা এবং ইসলামকে জীবনের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। এই বিষয়টি বুঝতে এবং মানতে হবে।
আখিরাতের প্রাধান্য
আখিরাতের প্রশ্নে আমরা অনেকটাই উদাসীন হয়ে পড়ি। অথচ আমাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তই আখিরাতের সাথে সম্পর্কিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব সম্পর্কে খুবই পরিষ্কারভাবে বলেছেন। আমাদের উচিত আল্লাহর ইবাদাত করা এবং তার রাসূলের সুন্নাহ মেনে চলা।
আমরা যদি আমাদের জীবনের প্রাধান্য এবং গুরুত্বের বিষয়টি সঠিকভাবে নির্ধারণ করি, তাহলে আমরা শুধু দুনিয়াতেই সফল হব না, আখিরাতেও সফলতা অর্জন করতে পারব। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহকে এবং তার রাসূলকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।