সন্তানদের ভবিষ্যত ও পাঠ্যপুস্তকের বিকৃত উপস্থাপন: অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া জরুরি

পিতামাতা হিসেবে সন্তানের সুস্থ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা প্রতিটি মা-বাবার মনের গভীরে থাকে। আমরা জানি, প্রতিদিনের জীবনের নানা ঝঞ্ঝাট ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সন্তানের হাসিমুখ দেখলে সমস্ত কষ্ট যেন নিমিষেই ম্লান হয়ে যায়। সন্তানের জন্য পিতামাতা নিজেদের শত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে তাদের সঠিক পথ প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যার জন্য আপনার এত পরিশ্রম, তাদের শিক্ষা কি সঠিক পথে হচ্ছে? আজকের সমাজে শিক্ষার আড়ালে অনেক সময়ই লুকিয়ে থাকে এমন কিছু বিষয় যা আমাদের সন্তানদের মন-মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, যখন সেই বিষয়গুলি পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপিত হয়, তখন তা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

পাঠ্যপুস্তকের বিকৃত শিক্ষা

সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) প্রণীত সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে “শরীফার গল্প” নামে একটি অংশ আলোচনায় এসেছে। এই গল্পে একজন ব্যক্তির লিঙ্গ পরিবর্তনের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। গল্পটি বর্ণনা করে কিভাবে শরীফা নামে একজন ব্যক্তি ছোটবেলায় ছেলে ছিল এবং বড় হতে হতে নিজেকে মেয়ে মনে করতে শুরু করে। পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে যে শরীরের লিঙ্গ নির্বিশেষে একজন মানুষ যদি নিজেকে বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে দাবি করে, তবে তাকে সেই লিঙ্গের মানুষ হিসেবে মেনে নিতে হবে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি জটিল ও বিভ্রান্তিকর ধারণা তৈরি করতে পারে, যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক ও সামাজিক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের প্রভাব

পশ্চিমা বিশ্বে এলজিবিটি (LGBT) আন্দোলনের একটি শক্তিশালী ধারা হচ্ছে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ। এই মতবাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জন্মগত দেহ ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর না করে একজন ব্যক্তি নিজেকে যেভাবে অনুভব করে, সেভাবেই তার পরিচয় নির্ধারণ করা। এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ, যা সমকামিতা ও বিভিন্ন ধরণের যৌনতার বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে এই মতবাদ সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলেও আমাদের সমাজে এটি এখনও একটি বিতর্কিত বিষয়। বিশেষ করে যখন এই ধরনের বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন তা সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের ফলাফল

ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদকে মেনে নেয়ার ফলাফল হতে পারে বিধ্বংসী। এটি সমাজে ঘৃণ্য সমকামি এজেন্ডার আইনী স্বীকৃতি দিতে পারে, যা নারীর ও পুরুষের সীমারেখা মুছে ফেলতে পারে। এছাড়া, এটি নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে পুরুষের অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে, যা নারীদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। এছাড়া, কিশোরী ও নারীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বাড়াতে পারে। পরিবারের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনসহ পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা হিসেবে।

বর্তমান বাস্তবতায় অভিভাবকদের দায়িত্ব

এই বাস্তবতায় অভিভাবকদের সতর্ক ও সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সন্তানদের পাঠ্যপুস্তকে কী শেখানো হচ্ছে, তা ভালোভাবে খেয়াল রাখা দরকার। সন্তানদের মানসিক ও যৌন বিকৃতি থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা আবশ্যক। পাশাপাশি, ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের ভায়বহতা সম্পর্কে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানোও অভিভাবকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সকল ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই ইস্যুর ভয়াবহতা সম্পর্কে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন।

ইসলামের দৃষ্টিতে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ

ইসলামে ট্র্যান্সজেন্ডার ও সমকামিতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের ওপর আনা ভয়াবহ শাস্তির কাহিনী আমাদের জানানো হয়েছে, যা ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ ও সমকামিতার বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। তাই ইসলামের অনুসারী হিসেবে আমাদের এই মতবাদগুলোকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া উচিত নয় এবং আমাদের প্রজন্মকে এসব থেকে দূরে রাখা উচিত।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের ভূমিকা

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। একটি সুস্থ সমাজ গড়তে হলে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পাঠ্যপুস্তকে যা অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা অবশ্যই সমাজের মানদণ্ড অনুযায়ী হওয়া উচিত। আমাদের সমাজের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলিই শিক্ষার্থীদের শেখানো উচিত।

আজকের যুগে প্রযুক্তি ও যোগাযোগের কারণে আমাদের সন্তানরা খুব সহজেই বিভিন্ন মতবাদ ও ধ্যান-ধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। তাদের জন্য কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের ওপরই বর্তায়। সন্তানের জন্য পিতামাতার ভালোবাসা ও মমতা অপরিসীম। তাই সন্তানের ভবিষ্যত রক্ষা করতে হলে আমাদের সচেতন ও সতর্ক হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post