LGBT কৌশল পরিবর্তন এবং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ

২০১৬ সালের পর বাংলাদেশে এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্র্যান্সজেন্ডার) নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বুঝতে পারে যে সরাসরি সমকামী অধিকারের দাবি তুলে দেশে অগ্রসর হওয়া কঠিন হবে। তারা কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ ও যৌন শিক্ষা প্রচারকে সামনে নিয়ে আসে। এই পরিবর্তনের পেছনে আরও কিছু কারণ ছিল।

ট্র্যান্সজেন্ডার আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব

২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা দাতারা ক্রমশ ট্র্যান্সজেন্ডার সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দাতারা যৌন শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যৌন বিকৃতির স্বাভাবিকীকরণে অর্থায়ন শুরু করে। এ কারণে দেশীয় এনজিওগুলোও এই দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ট্র্যান্সজেন্ডার নিয়ে কাজ করার আরও একটি সুবিধা ছিল উপমহাদেশে দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া নামক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি। ফলে হিজড়া আর ট্র্যান্সজেন্ডার শব্দদুটোকে এক সাথে ব্যবহার করে ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল।

যৌন শিক্ষার ভূমিকা

যৌন বিকৃতির সামাজিকীকরণ এবং বৈধতার জন্য শিক্ষার ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। এলজিবিটি সংগঠনগুলো মনে করে, শিশু-কিশোরদের মাথায় শুরুতেই যদি ঢুকিয়ে দেয়া যায় যে মানুষ ইচ্ছেমতো যৌন সঙ্গী বেছে নিতে পারে এবং নিজের পরিচয় বেছে নিতে পারে—এগুলো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকারের বিষয়—তাহলে এক প্রজন্মের মধ্যেই সমাজের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব।

হিজড়া নিয়ে অ্যাকটিভিজম এবং এনজিও ভূমিকা

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এনজিওগুলো যখন এইডস নিয়ে কাজ শুরু করে, তখন হিজড়া সম্প্রদায় নিয়েও কাজ শুরু হয়। ২০০০ সালে কেয়ার বাংলাদেশের অর্থায়নে বাঁধন হিজড়া সংঘ নামে একটি এনজিও গড়ে ওঠে। পরের বছর সুস্থ জীবন নামে আরেকটি এনজিও তৈরি করে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। ২০১০ নাগাদ হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এনজিওগুলোর কাজ ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। তবে এসব এনজিওর মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রদায়ের লাভ কতোটুকু হয়েছে তা নিয়ে আছে মিশ্র অনুভূতি।

২০০৭ সালে ব্র্যাকের উদ্যোগের পর হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো যৌন স্বাস্থ্যের বদলে ‘অধিকার’ এর আলাপের দিকে ঝুকে পড়ে। বাংলাদেশে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিও ওঠে, যা ২০১৩ সালে বাস্তবায়িত হয়।

ট্র্যান্সজেন্ডার ও হিজড়া: শব্দের রাজনীতি

বাংলাদেশে হিজড়া বলতে সাধারণত এমন মানুষকে বোঝায় যাদের জন্মগতভাবে প্রজননব্যবস্থা এবং যৌন বিকাশের ত্রুটি থাকে। এক কথায়, সাধারণ মানুষ হিজড়া বলতে বোঝায় যৌন এবং লিঙ্গ প্রতিবন্ধী মানুষকে। যেহেতু তাদের সমস্যা জন্মগত এবং এর ওপর তাদের কোন হাত নেই, তাই এ ধরণের মানুষের প্রতি সমাজে সহানুভূতি আছে।

২০১৫ সালে একটি ঘটনায় দেখা যায়, সরকারী চাকরির জন্য নির্বাচিত ১৪ জন হিজড়ার মধ্যে ১১ জনই শারীরিকভাবে সুস্থ পুরুষ। এরপর থেকে এনজিও এবং এলজিবিটি সংগঠনগুলো তাদের দাবিতে পরিবর্তন আনে। তারা হিজড়া সনাক্তকরণে শারীরিক পরীক্ষা বাদ দেয়ার দাবি তোলে এবং হিজড়ার পাশাপাশি ট্র্যান্সজেন্ডার শব্দটা সামনে আনতে শুরু করে।

ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের প্রচারণা

গত ৭-৮ বছরে বাংলাদেশে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের প্রসারে ব্যাপক কার্যক্রম হয়েছে। বাংলাদেশের এলজিবিটি আন্দোলন বর্তমানে তাদের পুরো শক্তি একত্রিত করেছে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছে, মিডিয়াতে ট্র্যান্সজেন্ডারদের তুলে ধরা হচ্ছে ইতিবাচকভাবে, প্রশাসনিকভাবে তাদের একধরণের অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার আলামত পাওয়া যাচ্ছে।

ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের এই ব্যাপক প্রচারণা ও প্রভাবের পেছনে আছে সেই পুরনো খেলোয়াড়েরা—পশ্চিমা দাতা, বৈশ্বিক এলজিবিটি নেটওয়ার্ক আর দেশীয় এনজিও। ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ প্রতিষ্ঠায় এসব এনজিও এবং বিভিন্ন এলজিবিটি সংগঠনগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্মকান্ড থেকে।

মিডিয়ার ভূমিকা

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মিডিয়ায় ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ এবং পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে অতিথি হিসেবে আনা হয়েছে নারী সাজা পুরুষদের, ফ্যাশন সাময়িকীতে তাদের মডেল হিসেবে দেখানো হয়েছে, এবং সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তাদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

এলজিবিটি আন্দোলন মিডিয়া অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদ প্রচারের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্র্যাক এলজিবিটির পক্ষে ইতিবাচক খবর প্রকাশের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছিল। ঠিক একই পদ্ধতি কাজে লাগানো হচ্ছে ট্র্যান্সজেন্ডারের ক্ষেত্রেও।

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের কৌশলগত পরিবর্তন এবং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ ও যৌন শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে এলজিবিটি মতবাদ প্রচারের প্রচেষ্টা একটি জটিল এবং বিতর্কিত প্রক্রিয়া। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় গোষ্ঠীর অর্থায়ন এবং সমর্থন নিয়ে এই আন্দোলনটি সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করছে। তবে এই প্রচেষ্টার পেছনে থাকা রাজনৈতিক এবং সামাজিক উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যত পদক্ষেপই ঠিক করবে এই আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি।

আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার এবং এলজিবিটি কমিউনিটির অধিকার সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের একটি সুদূরপ্রসারী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে "ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন দ্রুত পাশ হবে" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয় যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পেরেছে। এই প্রক্রিয়ার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), বিভিন্ন এনজিও এবং মার্কিন সরকারকে। ফ্লোরিডা রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিস্যান্টিস জানুয়ারি ২০২৪-এ মার্কিন সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, ইউএসএইডের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রচারে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করছে। এই প্রকল্পের জন্য ইউএসএইডের অর্থায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন বা নাগরিক সংগঠনকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

ইউএসএইডের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের আদমশুমারীতে প্রথমবারের মতো "তৃতীয় লিঙ্গ" এর জন্য আলাদা ঘর যুক্ত করা হয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে একটি ট্রান্সজেন্ডার আইনের খসড়া জমা দিয়েছে, যাতে যৌন বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং অন্যান্য অধিকার বৃদ্ধি পায়। ইউএসএইডের অর্থায়নে বাংলাদেশে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামের একটি সংস্থা এই খসড়া আইনের প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল।

শিক্ষার মাধ্যমে বৈধতা প্রদান

ট্রান্সজেন্ডার এবং এলজিবিটি মতবাদকে সামাজিকভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার ব্যবহার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) ২০২৩ সালের সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে "শরীফার গল্প" শিরোনামে একটি লেখা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। বইটির পৃষ্ঠাগুলোতে শরীফার গল্পে মূল চরিত্র শরীফা বলে, "আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে।" এই গল্পের মাধ্যমে শিশুদের শেখানো হচ্ছে যে লিঙ্গ পরিচয় একটি সামাজিক নির্মাণ এবং এটি ব্যক্তিগত অনুভূতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

শিক্ষার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডারবাদ এবং যৌন শিক্ষার নামে অবাধ যৌনতা ও এলজিবিটি মতবাদের স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের সংস্করণেও এই ধরনের শিক্ষার প্রভাব দেখা যায়, যেখানে শরীফার গল্পে একই ধরনের বার্তা রয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ ঢোকানোর পেছনে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং অন্যান্য এনজিও এবং এলজিবিটি সংগঠনগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার এবং এলজিবিটি মতবাদ প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউনিসেফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো যৌন শিক্ষার নামে বিকৃত যৌনতার দীক্ষা পাঠ্যপুস্তকে আনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। ২০১৬ সালে সুইডেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিডা (SIDA), আঞ্চলিক নারীবাদী এনজিও অ্যারো (ARROW), এবং দেশীয় নারীবাদী এনজিও ‘নারীপক্ষ’-এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌন শিক্ষার অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এই প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে যৌন শিক্ষার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের শেখানো উচিত যে, পর্নোগ্রাফি সমাজের জন্য হুমকি নয়, যিনা এবং সমকামীতা নিষিদ্ধ কিছু নয়, আর যৌনতা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ব্র্যাকের তৈরি ২০১৮-এর এক প্রতিবেদনে সমালোচনা করা হয়েছে যে, পাঠ্যবইগুলোতে হস্তমৈথুন, জেন্ডার আইডেন্টিটি (ট্রান্সজেন্ডারবাদ), এবং বিবাহপূর্ব যৌনতা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। ব্র্যাকের মতে এগুলোও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা দরকার।

বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার এবং এলজিবিটি এজেন্ডার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইন প্রণয়ন এবং শিক্ষার মাধ্যমে এই মতবাদকে সমাজের মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলোর সহায়তায় এই প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের এই পরিবর্তনের প্রতি ভিন্নমত এবং সমর্থন উভয়ই রয়েছে। আমাদের সকলের উচিত এল জিভিটির কালো চাইয়া এখনই রুখে দেওয়া না হয় আমাদের সমাজকে নষ্ট করে দেবে


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post