বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের বিকাশ এবং বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে বিকৃত যৌনতার স্বাভাবিকীকরণের কার্যক্রম শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে। পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে নানান আঙ্গিকে কাজ কর্ম চলছে। এই সময়কালে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা এলজিবিটি (LGBT) অধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে, যা নিয়ে বাংলাদেশের সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এলজিবিটি আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে দেশের নীতিনির্ধারক, মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছে। এই ব্লগে, আমরা বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের ইতিহাস, বিভিন্ন পর্যায়, এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

এলজিবিটি আন্দোলনের পটভূমি

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের পেছনে অনেকগুলি কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, পশ্চিমা ফান্ডিং এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিওদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধ ও যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারাভিযান শুরু হয়, যা এলজিবিটি আন্দোলনের প্রথম পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে 'যৌন অধিকার', 'যৌন সংখ্যালঘু', এবং 'যৌন বৈচিত্র্য' সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হতে থাকে।

শব্দজাদুঃ পরিভাষার আড়ালে প্রকৃত উদ্দেশ্য

বাংলাদেশে সরাসরি এলজিবিটি বা সমকামী শব্দটা ব্যবহার করে কাজ করা কঠিন হওয়ায়, এখানে শুরু থেকে কাজ হয়েছে বিভিন্ন অপরিচিত শব্দ, পরিভাষা এবং অ্যাক্রোনিমের (একাধিক শব্দের একত্রিত সংক্ষিপ্ত রূপ) আড়ালে। যেমন, 'যৌন স্বাস্থ্য', 'MSM' (Men Who Have Sex With Men), 'Gender Identity' (মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গ পরিচয়), 'SRHR' (Sexual and Reproductive Health and Rights), 'SOGI' (sexual orientation, gender identity), 'SOGISEC' (sexual orientation, gender identity, gender expression and sex characteristic) ইত্যাদি।

এই শব্দজাদুর ব্যবহার এলজিবিটি আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে আড়াল করার জন্য করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব পরিভাষা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয় যাতে তারা বিষয়টির গভীরে না যেতে পারে এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পায়।

পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতি: এলজিবিটি আন্দোলনের ধাপ

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের কৌশল হলো ধাপে ধাপে আগানো। প্রতি ধাপে তাঁরা নীতিনির্ধারক এবং আমলাদের ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত বা প্রভাবিত করে। এ পদক্ষেপগুলো এমন যে আলাদাভাবে খুব একটা চোখে পড়ার মতো না, কিন্তু দিন শেষে ধাপে ধাপে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়।

এই আন্দোলনের ইতিহাসকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে:

  1. প্রথম পর্যায়: 'এইডস প্রতিরোধ ও যৌন স্বাস্থ্য' - নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এই পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে এইডস প্রতিরোধের নামে প্রচারণা শুরু হলেও এর পেছনে এলজিবিটি আন্দোলনের প্রচেষ্টা ছিল।

  2. দ্বিতীয় পর্যায়: 'গবেষণা এবং যৌন অধিকার, যৌন সংখ্যালঘু, যৌন বৈচিত্র্য' - এই পর্যায়ে এলজিবিটি আন্দোলনের জন্য গবেষণা এবং যৌন অধিকারের বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়।

  3. তৃতীয় পর্যায়: 'সমকামী অধিকার' - এই পর্যায়ে সরাসরি সমকামী অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়।

  4. চতুর্থ পর্যায়: 'যৌন শিক্ষা ও ট্র্যান্সজেন্ডার' - ২০১৩ সালের পর থেকে এই পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে হিজড়াদের ট্র্যান্সজেন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।

মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং বামপন্থীদের ভূমিকা

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের শুরু থেকে মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং বামপন্থীরা এলজিবিটি এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় বা সহযোগী হিসেবে কাজ করে গেছে। অনেক সময় এই সহযোগিতার পেছনে আন্তর্জাতিক ফান্ডিংয়ের ভূমিকা ছিল।

এছাড়া প্রগতিশীল চিন্তাধারা বিশ্বাসগতভাবে পশ্চিম থেকে আসা যেকোন মতবাদকে বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করে নেয়। এর ফলে এলজিবিটি আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা কাজ করে গেছে।

আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলন সবসময়ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একটি রক্ষণশীল সমাজে এই ধরনের আন্দোলন চালানো কঠিন। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাধার পাশাপাশি, আইনি বাধাও তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং ফান্ডিং পেয়ে এলজিবিটি আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলন এখনও একটি বিতর্কিত এবং বিতর্কিত বিষয়। পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ চলেছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছে। মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং বামপন্থীদের সক্রিয় সহযোগিতায় এলজিবিটি আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও চ্যালেঞ্জগুলো এখনো রয়ে গেছে, তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়: এইডস প্রতিরোধ এবং যৌন স্বাস্থ্য সেবা

১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০৬/২০০৭ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের কাজক্রম মূলত 'এইডস প্রতিরোধ' এবং 'যৌন স্বাস্থ্য সেবা'র আওতায় সীমাবদ্ধ ছিল। এই সময়ে বিভিন্ন এনজিও (গণমুখী সংগঠন) এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সমকামী পুরুষ (MSM - Men who have Sex with Men) এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এইডস সচেতনতা এবং যৌন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতো।

এই সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জনগণের মধ্যে এলজিবিটি কমিউনিটির গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এ নিয়ে প্রচুর নিন্দা ও বিরোধিতা থাকলেও, এইডস প্রতিরোধের মতো একটি জরুরি স্বাস্থ্য বিষয়ক ইস্যুর সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে এসব কর্মসূচিগুলো কিছুটা হলেও সফলভাবে পরিচালিত হতে পেরেছিল।

পরিবর্তনের সূচনা: ২০০৬/২০০৭ সাল থেকে

২০০৬/২০০৭ সালের দিকে, বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যৌন স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি, সমকামীদের যৌন সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের যৌন অধিকারের দাবিতে আলাপ শুরু হয়। এই পরিবর্তনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেইমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেইমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত একটি গবেষণা কনসোর্টিয়ামে অংশগ্রহণ করার পর যৌন অধিকার বিষয়ে জনপরিসরে আলোচনা তৈরি করতে আগ্রহী হয়। ২০০৭ সাল থেকে, তারা বিভিন্ন মিটিং, ওয়ার্কশপ এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে শুরু করে যা যৌনতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (Sexual And Reproductive Health & Rights - SRHR) নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

যৌন অধিকার নিয়ে জনপরিসরে আলাপ

ব্র্যাকের উদ্যোগে ২০০৭ সালে ঢাকায় 'জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি' (লিঙ্গ ও যৌনতা) নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা হয়। এই কনফারেন্সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, কেনিয়া এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বক্তা ও অ্যাক্টিভিস্ট অংশগ্রহণ করে। সমকামীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসহ এলজিবিটি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

মিডিয়া ও অ্যাকাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে এলজিবিটি আন্দোলনের বিস্তার

এই কনফারেন্সের পর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌন অধিকার নিয়ে জনপরিসরে আলাপ তোলার প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করে। ব্র্যাকের গবেষকরা যৌন বৈচিত্র্য নিয়ে মিডিয়া এবং অ্যাকাডেমিকদের মাঝে আলোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এই উদ্যোগের ফলে, মিডিয়ায় এলজিবিটি ইস্যু নিয়ে লেখালেখির হার বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌনতা ও যৌন অধিকারের ওপর সংক্ষিপ্ত কোর্স বা মডিউল চালু হয়।

সামাজিকীকরণ এবং আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলন

ব্র্যাকের উদ্যোগে যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে জনপরিসরে আলাপ তোলার পাশাপাশি, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ এবং অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়।

এলজিবিটি আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়

ব্র্যাকের উদ্যোগ এবং অন্যান্য স্থানীয় এনজিওর প্রচেষ্টায়, বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে। এই পর্যায়ে, আন্দোলনটি আরও বেশি সামাজিকীকরণ পায় এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে এলজিবিটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এছাড়া, কিছু এলজিবিটি সংগঠন প্রকাশ্যে কার্যক্রম শুরু করে এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়।

ইতিহাস, প্রভাব এবং সমকালীন প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার) আন্দোলন এবং অ্যাক্টিভিজমের ইতিহাস বেশ সংক্ষিপ্ত হলেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শুরুতে মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এর বিস্তৃতি অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের উত্থান, বিকাশ, প্রতিবন্ধকতা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

১. এলজিবিটি আন্দোলনের শুরুর দিক: অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রাথমিক গঠন

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে, ইন্টারনেট চ্যাট গ্রুপ, মেইল গ্রুপ এবং ফোরামের মাধ্যমে সমকামী ব্যক্তিদের একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। এই নেটওয়ার্কটি মূলত যৌন সঙ্গী খোঁজার জন্য তৈরি হলেও, এটি সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য একটি সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৯ সালে রেঙ্গু নামে একজন ব্যক্তি "গে বাংলাদেশ" নামে একটি অনলাইন গ্রুপ তৈরি করেন, যা বাংলাদেশে এই ধরনের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

২. বিদেশি সংযোগ এবং এলজিবিটি আন্দোলনের বিকাশ

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলনের প্রতিটি ধাপেই বিদেশি সংযোগ দেখা যায়। যেমন, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন বিলেত ফেরত শিবানন্দ খান। রেঙ্গু, যিনি "গে বাংলাদেশ" তৈরি করেন, তিনিও পড়াশোনার জন্য জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি সময় পশ্চিমে কাটিয়েছিলেন।

২০০২ সালে "বয়েস অফ বাংলাদেশ" (BoB) নামে আরেকটি ই-গ্রুপ তৈরি হয়, যার প্রতিষ্ঠাতা কাজী হক বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। এই গ্রুপটি ইয়াহু চ্যাটের মাধ্যমে চালু হয় এবং পরবর্তীতে এটি অনলাইন থেকে অফলাইনে কার্যক্রম শুরু করে, যেমন: "গেট টুগেদার" এবং "ডিজে পার্টি" আয়োজন।

৩. অনলাইন থেকে অফলাইনে: গেট টুগেদার এবং ডিজে পার্টি

বয়েস অফ বাংলাদেশ মূলত মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছিল এবং তাদের কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রীক ছিল। তাদের "অনুষ্ঠান" গুলো ছিল সমকামীদের জন্য যৌন সঙ্গী বাছাইয়ের এবং একসাথে "ফূর্তি" করার সুযোগ। অন্যদিকে, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কার্যক্রম ছিল নিম্নবিত্ত এবং ঢাকার বাইরের সমকামীদের নিয়ে।

২০০৫ সালে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বয়েস অফ বাংলাদেশের। একই বছরের এপ্রিলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাথে মিলে বাংলাদেশে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষনায় কাজ করে তারা। তবে, এ গবেষনার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।

৪. এলজিবিটি অ্যাক্টিভিজমের উত্থান: ব্র্যাকের প্রভাব

২০০৭ সাল ছিল বয়েস অফ বাংলাদেশের জন্য একটি পরিবর্তনের বছর। সেই বছর ব্র্যাকের জেইমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করে বয়েস অফ বাংলাদেশ। এই ওয়ার্কশপ তাদের কাজের গতিপথকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং তারা অ্যাক্টিভিজমে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

২০০৮ সালে, বয়েস অফ বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এলজিবিটির প্রতীক রংধনু পতাকা টাঙ্গিয়ে ধানমন্ডির জার্মান ইন্সটিটিউটের ছাদের ক্যাফেতে একটি অনুষ্ঠান করে, যা সমকামী অধিকার নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়।

৫. আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং বৈশ্বিক প্রভাব

২০১০ সালে, নেপালের কাঠমুণ্ডুতে এলজিবিটি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করে ব্লু ডায়মন্ড সোসাইটি নামে একটি সমকামী সংগঠন। এই ওয়ার্কশপে বয়েস অফ বাংলাদেশের সদস্য শওকত ইমাম রাজীব অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, নরওয়ের এলএলএইচ নামে একটি সমকামী সংগঠন বাংলাদেশেও সমকামী অ্যাক্টিভিজমের অর্থায়ন করে।

২০০৯ সালে, জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউতে ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশ তোলা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে সেক্সুয়াল রাইটস ইনিশিয়েটিভ (এসআরআই) নামে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও, যা বয়েস অফ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে।

৬. প্রকাশ্য কার্যক্রম এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া

২০১০ সালে, অভিজিৎ রায়ের বই "সমকামিতা" প্রকাশিত হয়, যা বাংলাদেশের সমাজে একটি বড় ধাক্কা সৃষ্টি করে। বইটি সমকামীতা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন পশ্চিমা লেখকের লেখার ছায়া অনুবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে ইলগার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ব্যাপারে বক্তব্য উপস্থাপন করে বয়েস অফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি তানভীর আলিম। একই বছর আবারও জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউতে বাংলাদেশ সরকারকে ৩৭৭ নম্বর সেকশন বাতিল করতে বলা হয়, যা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করে।

৭. সমকামীদের জন্য সামাজিকীকরণের প্রচেষ্টা: প্রজেক্ট ধী

২০১৪ সালে, মার্কিন সরকারের স্টেইট ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে "প্রজেক্ট ধী" নামে একটি প্রকল্প শুরু করে বয়েস অফ বাংলাদেশ। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে মুন্সিগঞ্জের একটি রিসোর্টে দুই দিন ব্যাপী "ধী রেসিডেন্সি" নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশের সমকামীতাদের সামাজিকীকরণ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

৮. রূপবান: এলজিবিটি আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায়

ব্র্যাকের প্রশিক্ষণ এবং বয়েস অফ বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, ২০১১ সালে গড়ে ওঠে রূপবান নামে আরেকটি উদ্যোগ। ২০১৪ সালে "রূপবান" নামে দেশের প্রথম সমকামী ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।

৯. চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলন এখনো নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। ২০১৬ সালে জুলহাস মান্নান ও তার সহগামী মাহবুবকে হত্যার পর রূপবানসহ অন্যান্য সমকামী সংগঠনের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসে।

তবে, এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এলজিবিটি আন্দোলন একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে এবং ধীরে ধীরে সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেযা সমাজ নষ্টের কারণ হয়ে যেতে পারে তাই আমাদের এখনই এলজিবিটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন,এই ধরনের নিকৃষ্ট কাজ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা সকলকে হেফাজত করুন


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post