বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ করার প্রস্তাবটি বহুদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ছাত্রদের সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বন্ধ করা, কারণ বিগত ৩০ বছরে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি দেশকে তেমন কিছু দিতে পারেনি। বরং মায়ের কোল খালি হয়েছে অনেক। কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়েও বেশি গভীর। রাজনীতি কেবল সমস্যার উৎস নয়; এটি সমাধানেরও একটি মাধ্যম হতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।
ইতিহাসের পাতায় ছাত্র রাজনীতি
রাজনীতি সবসময়ই সমস্যার কারণ ছিল না। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১, ১৯৯০ এর গণ-আন্দোলন এবং এমনকি ২০২৪ সালেও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির অবদান রয়েছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এর বাইরেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ছাত্রদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করবেন না
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করাটা সহজ সমাধান মনে হলেও, এটি ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ছাত্রদের দেশের বিষয়গুলোতে কথা বলার সুযোগ বন্ধ করলে সমাজে একটি অবসন্নতা তৈরি হবে। বরং আমাদের প্রয়োজন একটি বুদ্ধিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস কিংবা সহিংসতা নয়, বরং মতের স্বাধীনতা, আলোচনা এবং সংলাপের মাধ্যমে দেশ গঠনের স্বপ্নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সঠিকভাবে রাজনীতি শেখানোর উদ্যোগ
আমরা যদি সত্যিই চাই যে শিক্ষার্থীরা দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখুক, তবে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমন একটি জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেম, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং সমাজসেবার প্রতি অনুরাগী হতে পারে। সঠিকভাবে রাজনীতি শেখানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স এবং ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কূটনৈতিক দক্ষতা অর্জন করবে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য গর্বিত প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
কামলা নয়, নেতা তৈরি করুন
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শুধুমাত্র আমলা কিংবা কর্মচারী তৈরি করার কারখানা না হয়ে ওঠে। বরং এমন মানুষ তৈরি হোক যারা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। ভুল করেও রাজনীতিকে খারাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত নয়, কারণ তাতে ফ্যাসিবাদ আরও শক্তিশালী হয়ে সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
রাজনীতির সঠিক চর্চা এবং শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কণ্ঠস্বর দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য, এবং এটিকে কখনোই দমিয়ে রাখা উচিত নয়।