ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা

বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ইসলামের আদর্শ এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। তবে, এ লক্ষ্য অর্জনের পথে বিভিন্ন মতভেদ ও বিভাজন তাদের মধ্যে গভীর বিরোধ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দেশে মোট ৫১টি ইসলামিক রাজনৈতিক গ্রুপ রয়েছে, যারা একে অপরের থেকে পৃথক এবং বিভক্ত। এর ফলে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা একটি সুনির্দিষ্ট ঐক্যে পৌঁছাতে পারছে না। এই বিভাজন এবং মতপার্থক্যগুলো কেবলমাত্র রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে না, বরং একটি সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেওবন্দী ১৩টি গ্রুপে বিভক্ত:

দেওবন্দী মতবাদ অনুসারীরা মূলত কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নিজেদের আন্দোলন পরিচালনা করে। কিন্তু তারা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্বের কারণে ১৩টি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে তাবলিগ জামাআতের দুটি শাখা (দেওবন্দপন্থী ও সাদ কান্দলভি পন্থী), ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই), এবং বিভিন্ন ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত আন্দোলনের গ্রুপ। এমন বিশাল বিভক্তি দেওবন্দী আন্দোলনের মধ্যে ঐক্যের অভাব প্রকাশ করে এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আহলে হাদিস ১৫টি গ্রুপে বিভক্ত:

আহলে হাদিস মতবাদও একইভাবে কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে পরিচালিত হলেও, তারা ১৫টি গ্রুপে বিভক্ত। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে জমিয়তে আহলে হাদিস, শুরাবায়ে আহলে হাদিস, আহলে হাদিস আন্দোলনের বিভিন্ন শাখা এবং অন্যান্য ছোট ছোট গ্রুপ। তাদের মধ্যে মতবিরোধ এবং নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে এসে একত্রিত হওয়া কখনো সম্ভব হয়নি।

বেরলভী ১৬টি গ্রুপে বিভক্ত:

বেরলভী মতবাদের অনুসারীরা মূলত সুফিবাদ এবং পীর-আউলিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখে। কিন্তু তারা আরও ১৬টি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, ফুলতলী, দেওয়ানবাগী, রাজারবাগী এবং মাইজভাণ্ডারী। এসব গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচার-অনুষ্ঠান এবং নেতৃত্বের পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে।

নিষিদ্ধ সংঘটন ৬টি গ্রুপে বিভক্ত:

বাংলাদেশে কিছু সংঘটন রয়েছে, যেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের কার্যক্রমের কারণে। এসব গ্রুপের মধ্যে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরিক এবং আইএস অন্যতম অনেকের মতে বাস্তবে আইএস এর অস্তিত্ব নেই পশ্চিমার তৈরি মদদপোষ্ট এরা। এদের কার্যক্রম সাধারণত উগ্রপন্থী এবং সহিংসতামূলক, যা ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের কৌশল এবং আদর্শ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জামায়াত শিবির ১টি গ্রুপ:

জামায়াত শিবির একক একটি দল হিসেবে কাজ করে। যদিও তাদের একটি সংগঠিত দল হিসেবে নিজেদের আদর্শিক ভিত্তি রয়েছে, তবুও তারা জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্র এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারেনি, যদিও তারা তাদের শ্রাদ্ধ অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছে তবে এখন পর্যন্ত বাকি হকপন্থী  বৈধ ইসলামি দলগুলোকে একত্রিত করতে না পারা আমি তাদের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করি।

ঐক্যের অভাব এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার অসম্ভাব্যতা:

নিষিদ্ধ দল গুলোর কথা বাদ দিলাম কিন্তু অন্যান্য দলগুলোর বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো মূলত নিজেদের মতাদর্শের কারণে পরস্পরের থেকে দূরে রয়েছে। তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি এবং ভবিষ্যতেও তা খুবই কঠিন। ইসলামের আদর্শ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সমাজে ঐক্য এবং সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন মতপার্থক্য এবং নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ থাকায় একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামের ভিত্তিতে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সকলের একত্রিত হওয়া এবং একসঙ্গে কাজ করা। যখন পর্যন্ত ইসলামিক দলগুলো নিজেদের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করতে পারবে না, তখন পর্যন্ত ইসলামের আদর্শে ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ গঠন করা অত্যন্ত কঠিন। এজন্য একটি কার্যকর এবং ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা সমস্ত দল এবং গ্রুপকে একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শে নিয়ে আসতে পারে।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post