আজকের সমাজে কিশোরদের মনস্তত্ত্ব এবং তাদের জীবনধারায় যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের সবাইকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। সুযোগ পেলেই আমরা রাস্তার ধারের স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করি। শিক্ষকরা ওদের পড়ায়, কিন্তু আমাদের দরকার ওদের মনস্তত্ত্ব বোঝা। কারণ, আমাদের কিশোর প্রজন্ম আজ কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি। কিশোরদের বয়সটি এমন একটি সময় যখন তারা জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করে এবং প্রভাবিত হয় চারপাশের পরিবেশ থেকে। কিন্তু আজকের সমাজে এই বয়সের মধ্যে প্রেম এবং সম্পর্কের প্রতি আগ্রহই যেন প্রধান হয়ে উঠেছে।
কিশোর প্রেমের ঝুঁকি এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া
কিশোরদের প্রেম এবং সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ সমাজে নানা প্রশ্ন তুলছে। তারা নিজেদের স্মার্ট মনে করে, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব দেখা যায়। তারা নিজেদের শরীরের ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বড়দের ভাবনা তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তারা সিনিয়রদের নিয়ে উপহাস করে, নিজেরা নিজেদের মধ্যে মেতে থাকে। এই বিষয়টি কিশোরদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিশোররা এই বয়সে প্রেমে জড়ানোর কারণে অনেক সময় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি থেকে দূরে সরে যায়।
সমাজের ছোট্ট পরিসরে ঘুরপাক খাওয়া কিশোর প্রজন্মের প্রেমের চয়েসও সেই ছোট্ট পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকে। যাদের সঙ্গে তারা দৈনন্দিন মেলামেশা করে, সেই বন্ধুরাই তাদের প্রেমিক বা প্রেমিকা হয়ে ওঠে। গ্রামীণ জীবনে এই সীমাবদ্ধতা আরও বেশি, যেখানে কিশোরদের পৃথিবী হলো স্কুলের আশেপাশের কিছু গ্রাম এবং কয়েকজন বন্ধু।
কেন কিশোর প্রেম সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনে?
কিশোর বয়সের প্রেম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আমরা দেখতে পাই, এই বয়সে কিশোররা আবেগে ভুল করে থাকে। প্রেমের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। অনেকেই এমন সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে যায় যা তাদের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে তোলে। এই বয়সে ভালো-মন্দের বিচার করার পরিপক্কতা না থাকায় তারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। প্রেমে জড়িয়ে কিশোররা শিক্ষাজীবনে মনোযোগ দিতে পারে না, যার ফলে ভবিষ্যতে পেশাগত বা ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।
কিশোরদের সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
কিশোরদের প্রেম এবং সম্পর্কের বিষয়ে সচেতন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বলা উচিত যে, স্কুলজীবন তাদের জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায় যা ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে। এই সময়টি প্রেম বা সম্পর্কের জন্য নয়, বরং নিজের উন্নতির জন্য। তাদের শিক্ষাজীবনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে এবং নিজের জীবনকে একটি সঠিক পথে নিয়ে যেতে হবে।
স্কুলজীবনের প্রেম, সম্পর্কের মোহ আসলে সাময়িক। একবার উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়ালে জীবনের আরও বড় পরিসর দেখা যাবে, আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হবে। এই সময়ের অপেক্ষার মূল্য অনেক বেশি, কারণ এটি জীবনের মান উন্নত করার সুযোগ দেয়।
আধুনিক জাহেলিয়াত: কিশোর প্রেমের পেছনের কারণ
প্রেমের বিষয়টি কিশোরদের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, তারা এটাকে জীবনের সর্বোচ্চ অর্জন মনে করে। আধুনিক সমাজের এই সমস্যা বা "জাহেলিয়াত" সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। প্রেমকে কিশোরদের কাছে এতটা মহান করে তুলে ধরা হয়েছে যে, তারা এর থেকে মুক্তি পেতে চায় না। তারা মনে করে প্রেম কোনো পাপ নয়, বরং এটি পবিত্র এবং সুন্দর।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রেম এবং সম্পর্কের এই মোহ কিশোরদের ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। তারা জীবনের মানে বোঝার আগেই প্রেমে মগ্ন হয়ে যায় এবং তাদের জীবনবোধ সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না।
দাওয়াহ এবং জীবনের সঠিক পথে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা
আমাদের কিশোরদের জন্য দরকার সময়মতো দাওয়াহ। তাদের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করতে হবে। অনেক সময় তারা প্রেমের নামে ভুল পথে চলে যায়, কিন্তু তাদের জন্য সামনে দাওয়াহ স্টেশনগুলো রয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা এমন কিছু শিক্ষার সুযোগ পাবে যা তাদের জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। দাওয়াহ এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসার মাধ্যমেই তারা জীবনের সঠিক পথ খুঁজে পাবে।
আমাদের দায়িত্ব হলো কিশোরদের এই মোহময় জীবন থেকে বিরত রাখা। তাদের আরও কিছুটা সময় দেওয়া, যাতে তারা নিজেদের সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারে এবং জীবনের প্রকৃত মানে বুঝতে পারে।
কিশোর প্রজন্মের ভবিষ্যৎ এবং করণীয়
বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক পথে নিয়ে আসা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিশোররা যখন জীবনের অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না, তখন তাদেরকে সামনে একটি স্পষ্ট এবং সুন্দর লক্ষ্য দেখাতে হবে। তাদের প্রেম এবং সম্পর্কের পরিবর্তে শিক্ষার দিকে মনোযোগী হতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য অন্য জায়গায়—জ্ঞানার্জনে, সৃজনশীলতায়, এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায়।
কিশোরদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই এমনভাবে শিক্ষিত করা উচিত যাতে তারা জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। শুধু প্রেম নয়, তাদের ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে এবং জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
আমাদের কিশোর প্রজন্ম এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে এই প্রেমের মোহ থেকে বিরত রাখতে হবে এবং জীবনের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। তাদের সামনে আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমরা কিশোরদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিলে ইনশাআল্লাহ তারা সফল হবে এবং তাদের জীবনের মান উন্নত হবে।