পুনরুত্থানের দিন এবং সুপারিশের ঘটনা
পুনরুত্থানের দিন সমগ্র মানবজাতি যখন শঙ্কিত থাকবে, তখন তারা একের পর এক নবীর কাছে সুপারিশের জন্য যাবে। কিন্তু আদম (আ.), নূহ (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মূসা (আ.) ও ঈসা (আ.) – কেউই নিজেকে এই দায়িত্বের উপযুক্ত মনে করবেন না।
অবশেষে, মানুষের আশা ভরসা গিয়ে শেষ হবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে। তিনি আল্লাহর অনুমতি নিয়ে মানবজাতির জন্য সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাঁর নবীকে অনুমতি দেবেন, এবং তিনি (সা.) সিজদাবনত হয়ে বলবেন:
"উম্মাতি, উম্মাতি" (আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ)।
এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, কিয়ামতের দিন নবীগণ নিজের অবস্থার জন্য শঙ্কিত থাকবেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) একমাত্র তাঁর উম্মাহর জন্য চিন্তিত থাকবেন। এই মহান মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর সুন্নাহর প্রতি আনুগত্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার পরীক্ষা
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা শুধুমাত্র মুখের কথায় প্রকাশিত হতে পারে না। আমাদের কাজ, আমল, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করাই হলো প্রকৃত ভালোবাসার প্রমাণ। তিনি (সা.) বলেছেন:
"তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা, সন্তান এবং সমগ্র মানবজাতির চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠি।" (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
তাঁর (সা.) প্রতি ভালোবাসার চিহ্ন
তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা:রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য যে জীবনপদ্ধতি রেখে গেছেন, তা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা উচিত। খাদ্য গ্রহণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘুম, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং পারিবারিক জীবনে তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ আমাদের ভালোবাসার পরিচায়ক।
তাঁর সম্মান রক্ষা করা:
আমরা যদি দেখি কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অপমান করছে বা তাঁর সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে, তখন আমাদের দায়িত্ব তা প্রতিহত করা। এটি আমাদের ঈমানের অংশ।
তাঁর জন্য দুয়া করা ও সালাম প্রেরণ করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করবে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত করবেন।" (সহীহ মুসলিম)
তাঁর প্রতি সালাম ও দরুদ পাঠ করা শুধু আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ নয়, এটি আল্লাহর কাছ থেকে বড় পুরস্কারের মাধ্যমও।
তাঁর উম্মাহর প্রতি দয়া ও সহানুভূতি:
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানবজাতির প্রতি দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল। তাঁর উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা যদি নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করি, তাহলে আমরা প্রকৃত অর্থেই তাঁর সুন্নাহর অনুসারী হতে পারব।
প্রশ্ন করার সময় এসেছে: আমরা কী করছি?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ কি আমরা আমাদের জীবনের অংশ করেছি? যখন তাঁর সম্মান আঘাতপ্রাপ্ত হয়, আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই? আমাদের জীবনযাত্রা কি তাঁর শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
কিছু প্রশ্ন যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে:
- আপনি যদি কিয়ামতের দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তিনি যদি জিজ্ঞেস করেন, "তোমার জীবনে আমার সুন্নাহের কতটুকু অনুসরণ করেছ?" আপনি কী উত্তর দেবেন?
- যখন তাঁর (সা.) সম্মানহানি করা হয়, তখন আপনি কী করেছেন?
- আপনি কি আপনার সন্তানদের তাঁর (সা.) শিক্ষা সম্পর্কে জানাচ্ছেন?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য আমাদের দায়িত্ব
তাঁর জীবনচরিত অধ্যয়ন:রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন অধ্যয়ন করা এবং তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। তাঁর চরিত্র, তাঁর ধৈর্য, তাঁর দয়া, এবং তাঁর ঈমানের দৃঢ়তা আমাদের জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা।
তাঁর সুন্নাহর প্রচার ও প্রসার:
আমাদের শুধু নিজেরা তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা নয়, বরং অন্যদের মধ্যেও তা প্রচার করা উচিত। পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষা প্রচার করতে হবে।
তাঁর জন্য যথার্থ ভালোবাসা লালন করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা কেবল মুখের কথা নয়; এটি আমাদের হৃদয় থেকে আসা একটি অনুভূতি, যা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত। তাঁর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, এবং আনুগত্যই আমাদের ঈমানের মূল ভিত্তি। কিয়ামতের দিন যখন আমরা শঙ্কিত অবস্থায় থাকব, তখন তিনিই আমাদের সুপারিশ করবেন। সেই মুহূর্তে যদি আমরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তাহলে আমরা কি বলতে পারব যে আমরা তাঁকে যথার্থভাবে ভালোবাসি? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের প্রতিদিনের কাজ এবং জীবনযাপনের মাধ্যমেই খুঁজে বের করতে হবে।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ।