বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সম্প্রতি একটি বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে: "আপনার সন্তান জঙ্গি হচ্ছে না তো?"। প্রতিবেদনে কিছু অদ্ভুত ও হাস্যকর যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে, যা ধর্মপালনকারী একজন মুসলমান তরুণ-তরুণীকে "জঙ্গি" হিসাবে সন্দেহ করার পটভূমি সৃষ্টি করে। প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলোকে "সতর্কতার লক্ষণ" বলা হয়েছে, তা আসলে একজন আদর্শ মুসলমানের স্বাভাবিক জীবনধারা। এই ধরনের সাংবাদিকতা শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, বরং একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অযথা সন্দেহের আওতায় নিয়ে আসে।
ধর্মপালন মানেই কি জঙ্গিবাদের সূচনা?
প্রতিবেদনে যেসব লক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো মূলত ধর্মীয় সচেতনতার অংশ। যেমন:
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া: ইসলামের মৌলিক ইবাদত। এটি প্রতিটি মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ।ধর্মীয় বই পড়া: ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন একটি পবিত্র ও উৎসাহব্যঞ্জক কাজ। কোরআন, হাদিস বা ইসলামিক ইতিহাস পড়ার অর্থ কি "জঙ্গিবাদ"?
বয়স অনুযায়ী বন্ধুত্বের পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধি বা ব্যক্তিগত উন্নতির সময় একজন তরুণ নতুন বন্ধুত্ব গড়তে পারে এবং পুরনো অভ্যাস বদলাতে পারে। এটি কি অপরাধ?
জাতীয় দিবসে অনাগ্রহ: কারো ব্যক্তিগত পছন্দ বা ধর্মীয় বিশ্বাস তাকে কোন উৎসবে অংশগ্রহণ না করার স্বাধীনতা দেয়। এটি কোনোভাবেই সন্দেহজনক নয়।
এই বিষয়গুলো কীভাবে একজনকে "জঙ্গি" বানাতে পারে, তা বোঝা যায় না। ধর্মপালনকে এভাবে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা শুধু একজন মুসলমানকে সমাজে হেয় করার কৌশল।
সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস
এই ধরনের প্রতিবেদন সরাসরি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি একধরনের বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। যারা সঠিকভাবে ধর্ম পালন করেন, তারা হয়রানি ও সন্দেহের শিকার হন।
প্রশ্নগুলো যেগুলো ওঠা উচিত:
ধর্মচর্চা মানেই কি জঙ্গিবাদ?কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। সুতরাং যারা বেশি ধর্মীয়, তারা শান্তিপ্রিয় হবেন, জঙ্গি নয়।
কেন একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে?
মুসলমানদের ধর্মপালন নিয়ে কেন এত প্রশ্ন? অন্য ধর্মের অনুসারীরা যদি তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন, তাহলে তাদের কি একইভাবে সন্দেহ করা হয়?
ধর্মীয় চর্চা কি সমাজের জন্য ক্ষতিকর?
একজন ব্যক্তি যদি নেশা, অপরাধ বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপ না করে বরং নৈতিক ও আত্মশুদ্ধি চর্চা করে, তবে সেটা কি সমাজের জন্য উপকারী নয়?
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, একজন মুসলমানের ধর্মীয় চর্চা তাকে আল্লাহর কাছে ঘনিষ্ঠ করে তোলে এবং মানুষের প্রতি দয়াশীল ও ন্যায়পরায়ণ করে। ধর্মীয় মূল্যবোধ কখনো জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে না। বরং ইসলাম যে কোনো ধরনের চরমপন্থা বা অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদনটি একজন ধর্মপরায়ণ মুসলমানকে সন্দেহের চোখে দেখার অপচেষ্টা। এটি একটি উদাসীন ও একতরফা ধারণা তৈরির প্রচেষ্টা, যা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মপালন করা কোনো অপরাধ নয়, বরং এটি একজন মানুষের নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির চিহ্ন।
আমাদের সমাজে এমন সাংবাদিকতা এবং অযৌক্তিক ধারণার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় চর্চাকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।