পেশাজীবী" বুদ্ধিজীবী এবং "অর্গানিক" বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা

"সংকটের মূল হলো পুরোনোটি মারা যাচ্ছে, কিন্তু নতুনটি জন্ম নিতে পারছে না; এই মধ্যবর্তী সময়ে নানা ধরনের বিকৃত ও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়" – আন্তোনিও গ্রামসি

আন্তোনিও গ্রামসির এই উক্তিটি গভীরভাবে সমাজের রূপান্তরের ক্রান্তিকালকে ব্যাখ্যা করে। সমাজে যখন পুরোনো কাঠামো বা ব্যবস্থাপনা তার কার্যকারিতা হারাতে শুরু করে এবং নতুন কিছু জন্ম নেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে দেরি হয়, তখনই এক অদ্ভুত সময়ের উদ্ভব হয়। এই সময়টা সংকটময়, কারণ পরিবর্তনের জন্য দরকারি নতুন ধারনা বা কাঠামো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এই শূন্যতায় সমাজে নানা ধরনের বিকৃত, অস্বাভাবিক এবং জটিল লক্ষণ দেখা দেয়।

সমাজ ও বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা

গ্রামসি বুদ্ধিজীবীদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন—"পেশাজীবী" বুদ্ধিজীবী এবং "অর্গানিক" বুদ্ধিজীবী। পেশাজীবী বুদ্ধিজীবীরা মূলত তাদের পেশাগত জীবন বা অর্থনৈতিক কারণে কোনো মতামত দেন, সমাজের ভাবনা গঠন করেন, এবং এর জন্য তারা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকেন। এই শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা সংকটকালে অনেক সময় নিষ্ক্রিয় থাকেন বা ক্ষমতাবানদের সমর্থনে কথা বলেন।

অন্যদিকে, অর্গানিক বুদ্ধিজীবীরা সমাজের অন্তর্গত, তাঁরা সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে জড়িত এবং সমাজের স্বার্থে তাঁদের বুদ্ধি ও চিন্তা ব্যবহার করেন। সংকটকাল আসলে এই অর্গানিক বুদ্ধিজীবীদের উন্মোচনের সময়। তাদের ভূমিকা তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ সংকটের সময় সমাজ নতুন কিছু খোঁজে এবং তখনই তাদের চিন্তার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটতে শুরু করে।

সংকটের মধ্যবর্তী সময়: অসামঞ্জস্যতার বিকৃতি

যখন পুরোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা আদর্শ তার ক্ষমতা ও কার্যকারিতা হারাতে থাকে, তখন সমাজ অস্থির হয়ে ওঠে। গ্রামসির ভাষায়, এই অস্থির সময়েই আমরা নানা ধরনের বিকৃতি ও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখি—রাজনৈতিক অপব্যবস্থা, সামাজিক বৈষম্য, এবং নৈতিকতার অবক্ষয়। কিন্তু এই সময়টাও অর্গানিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য নতুন ধারনা গঠনের সময়। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, বিকল্প ধারণা, এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা সংকট মোকাবিলার পথ দেখায়।

সংকটের এই শূন্যতার ভেতর নতুন চিন্তা এবং আদর্শের জন্ম নেওয়ার সময় হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে এই অস্থিরতা নেগেটিভ মনে হতে পারে, তা আসলে সমাজের পুনর্গঠনের এক ধাপ। নতুন ভাবনা, নেতৃত্ব এবং আদর্শ তখনই আবির্ভূত হয় যখন পুরোনো কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে।

ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত

গ্রামসি সংকটকে শুধু নেতিবাচক হিসেবে দেখেননি। তাঁর মতে, সংকট আমাদের নতুনের সন্ধান করতে বাধ্য করে। যখন সমাজে পুরোনো সিস্টেম এবং ধারণাগুলো আর কাজ করে না, তখন মানুষ নতুন সমাধানের দিকে এগিয়ে যায়। আর এই নতুন ধ্যান-ধারণার পথিকৃৎ হয় মূলত অর্গানিক বুদ্ধিজীবীরা, যারা সমাজের গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেন। সংকট সমাজকে বাধ্য করে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে। যদিও এই সময়টা জটিল এবং অস্বাভাবিক, তা এক নতুন যুগের সূচনা করতে সহায়ক হয়।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post