আমরা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন কিছু গড়ার প্রয়োজন বোধ করি—হোক তা ব্যক্তিগত, সামাজিক, বা বৈশ্বিক ক্ষেত্রে। তবে নতুন কিছু শুরু করতে গেলে অনেক সময়ই পুরোনো জিনিসের ওপর ভিত্তি করে চলার প্রবণতা থাকে, যা প্রায়শই বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। এই প্রবণতা সম্পর্কে একটি বাস্তব উদাহরণ আমাদের বাড়ির হোম প্রজেক্টগুলো।
ছোটবেলায় আমি বাবার সাথে বিভিন্ন ঘর মেরামত, রং করা, কিংবা নতুন কিছু বসানোর কাজে অংশ নিতাম। এই কাজগুলো করতে গিয়ে বাবার কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিলাম—যেকোনো নতুন প্রজেক্ট শুরু করতে হলে, পুরোনো জিনিস ভেঙে, মাটির সাথে মিশিয়ে পরিষ্কার একটি জায়গা তৈরি করতে হবে। নতুন রং করার আগে পুরোনো রং ঘষে তোলা, ফুটো ঠিক করা, ভাঙাচোরা মেরামত করা—এসব না করলে যতই সুন্দর রং লাগান না কেন, সেটা বেশিদিন টিকবে না।
এটা শুধু ঘরের কাজে নয়, জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পুরোনো, অব্যবহৃত কাঠামোর ওপর কিছু নির্মাণ করলে সেই নতুন জিনিসও নড়বড়ে হয়ে যাবে। পুরোনো সীমাবদ্ধতার মধ্যে নতুন চিন্তা করতে গেলে, তা কখনোই পরিপূর্ণতা লাভ করে না। নিজের মাপ অনুযায়ী নির্মাণ করতে গেলে আপনাকে পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলতে হবে, এবং নতুন কিছু তৈরি করতে হবে।
এ শিক্ষাটি আজকের আধুনিক জগতেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সমাজ, সংস্কৃতি, এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত আমরা অনেক পুরোনো মতবাদ নিয়ে এগোতে চেষ্টা করি, যা ইতোমধ্যেই পচে গেছে। মডার্নিসম, লিবারেলিসম, সেক্যুলারিসম—এসব মতবাদ একসময় হয়তো কার্যকর ছিল, কিন্তু এখন এগুলোর কাঠামো জীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোর ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করলে, সেই নতুন সৃষ্টিও হবে ক্ষয়প্রাপ্ত ও অস্থায়ী।
আমাদের সত্যিকারের নতুন কিছু নির্মাণ করতে হলে, সেই পুরোনো কাঠামো ভেঙে, টুকরো টুকরো করে, জায়গা পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রাচীন জ্ঞানের ভিত্তিতে, কুরআন ও সুন্নাহকে অবলম্বন করে আমরা নতুন নির্মাণ করতে পারব, যা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত। আধুনিক সময়ের আলিমরা যদি তাদের চিন্তার ভিত্তি সেই প্রাচীন ইসলামী শিক্ষার ওপর স্থাপন করেন, তাহলে তারা সেই ঐতিহ্যের মতোই শক্তপোক্ত ও টেকসই কিছু নির্মাণ করতে পারবেন।
আমাদের প্রয়োজন সাহস নিয়ে পুরোনো সব পচন ধরা কাঠামো ভেঙে ফেলার এবং একটি নতুন দিগন্তে যাত্রা শুরু করার, যেখানে সত্যিকারের জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারব।