ডিভোর্স, চুরি, ঘুষ, ও বৃদ্ধাশ্রম শিক্ষিতদের শীর্ষে অবস্থান

 শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। এটি আমাদের উন্নতি, নৈতিকতা এবং সমাজের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, সমাজে যে সকল নেতিবাচক কাজের শীর্ষে রয়েছে, তার অনেকগুলোতেই শিক্ষিত মানুষদের ভূমিকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ডিভোর্স, চুরি, ঘুষ খাওয়া এবং পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতো গুরুতর বিষয়গুলোতে শিক্ষিতরা শীর্ষস্থান দখল করছে। এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটির ইঙ্গিত দেয়। অপরদিকে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা যে নৈতিক ও মহান আদর্শের শিক্ষা দেয়, তা যদি আমরা গ্রহণ করতাম, তাহলে এমন অবক্ষয়ের শিকার হতাম না। অথচ ইসলামী শিক্ষাকে আমরা পিছিয়ে থাকা সংস্কৃতি হিসেবে অবজ্ঞা করি।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব:

  1. সমাজে শিক্ষিতদের এই নেতিবাচক ভূমিকার কারণ।
  2. ইসলামী শিক্ষার মহান আদর্শ।
  3. আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং সমাধান।


ডিভোর্স: শিক্ষিতদের শীর্ষে অবস্থানের কারণ

সমাজে ডিভোর্সের হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, শিক্ষিতদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে নৈতিকতার অভাব:বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতি অধিক জোর দেওয়া হলেও সম্পর্ক পরিচালনার শিক্ষা দেওয়া হয় না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া এবং সহনশীলতার অভাবে ডিভোর্সের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত আসে।
আত্মকেন্দ্রিকতা:উচ্চশিক্ষিতরা অনেক সময় নিজেকে কেন্দ্র করে চিন্তা করেন। পারস্পরিক ত্যাগ ও ধৈর্যের পরিবর্তে তারা নিজেদের চাহিদা এবং ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেন।
ইসলামী শিক্ষার অভাব:ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। এটি শুধু দুটি মানুষের নয়, দুটি পরিবারের মিলন। সেখানে ধৈর্য, বোঝাপড়া এবং একে অপরের প্রতি সম্মানের শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু ইসলামী শিক্ষার অভাবের কারণে এই আদর্শগুলোর চর্চা কমে গেছে।


চুরি ও ঘুষ: শিক্ষিতদের ভূমিকা

সমাজে চুরি ও ঘুষের শীর্ষেও শিক্ষিতরা অবস্থান করছে। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক।

নৈতিক শিক্ষার অভাব:বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার শিক্ষা প্রায় অনুপস্থিত। মানুষ কেবল আর্থিক সাফল্যকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরে নেয়। ফলে দুর্নীতির পথ বেছে নিতে তাদের দ্বিধা হয় না।
প্রতিযোগিতামূলক সমাজ:প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অনেক শিক্ষিত মানুষ চুরি ও ঘুষের মতো অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। তারা মনে করে, "উপায় যেকোনো হোক, লক্ষ্য পূরণ করতেই হবে।"

ইসলামের আদর্শ থেকে দূরে থাকা:ইসলাম চুরি ও ঘুষকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন: "আর চোর, নারী বা পুরুষ উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান হিসেবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।" (সূরা মায়েদা: ৩৮) ইসলামের এই কঠোর বিধান শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সৃষ্টি করাই এর মূল লক্ষ্য।


বৃদ্ধাশ্রমে পিতা-মাতাকে পাঠানোর শীর্ষে শিক্ষিতরা

পিতা-মাতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। অথচ বর্তমান সমাজে বৃদ্ধাশ্রমে তাদের পাঠানোর প্রবণতা ক্রমবর্ধমান, এবং এ ক্ষেত্রেও শিক্ষিতরাই শীর্ষে।

আধুনিকতার মোহ: শিক্ষিত ব্যক্তিরা অনেক সময় আধুনিক জীবনের মোহে নিজেদের পিতা-মাতার দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন। তারা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বোঝা মনে করেন এবং তাদের জন্য সময় দিতে চান না।

ইসলামের শিক্ষা বিস্মৃত হওয়া: ইসলাম পিতা-মাতার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের আদেশ দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: "তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন বা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের ‘উহ্’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।" (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৩) শিক্ষিতদের মধ্যে এই মূল্যবোধ চর্চার অভাবেই পিতা-মাতা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।


ইসলামী শিক্ষার মহান আদর্শ

ইসলামী শিক্ষা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটি কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা, আদর্শ, এবং মানবিক গুণাবলির শিক্ষা দেয়।

ডিভোর্স প্রতিরোধে ইসলামের শিক্ষা: ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। বিবাহকে সহজ ও সুস্থ রাখার জন্য ইসলামে মোহরানা, হালাল রোজগার, এবং পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।
চুরি ও ঘুষ বন্ধে ইসলামের ভূমিকা: ইসলাম মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে। একজন মুসলমান বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সবসময় তার কর্ম দেখছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে চুরি ও ঘুষ মহাপাপ, যা দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি ডেকে আনে।
পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব: ইসলামে পিতা-মাতার খেদমতকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।নবী করিম (সা.) বলেছেন: "পিতা-মাতা সন্তানের জন্য জান্নাতের দরজা।" (তিরমিজি) ইসলামী শিক্ষার এই মহান আদর্শ যদি আমরা চর্চা করতাম, তাহলে সমাজে এইসব অবক্ষয় দেখা দিত না।


আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান সমস্যা হলো:

নৈতিক শিক্ষার অভাব: শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ। এটি নৈতিক উন্নতির দিকে নজর দেয় না।
ইসলামের প্রতি অজ্ঞতা: ইসলামী শিক্ষাকে অনেকেই "প্রাচীন সংস্কৃতি" বলে অবজ্ঞা করেন। অথচ এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আদর্শ শিক্ষা দেয়।

ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা: বর্তমান শিক্ষা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। এতে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে।


সমাধান: ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতার পুনর্জাগরণ

সমাজে এই অবক্ষয় দূর করার জন্য আমাদের করতে হবে:

শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি: স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতা ও ইসলামী শিক্ষার পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
ইসলামী শিক্ষা প্রসার: ইসলামের আদর্শ এবং মহান শিক্ষাগুলোকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে।ইসলামী শিক্ষার আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে হবে। 
আল-কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ: মানুষকে কুরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞানার্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।


ডিভোর্স, চুরি, ঘুষ, এবং বৃদ্ধাশ্রমে পিতা-মাতাকে পাঠানোর মতো কাজগুলোতে শিক্ষিতরা শীর্ষে অবস্থান করছে, যা আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতার পুনর্জাগরণ।

ইসলামী শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, এবং মানবিকতার শিক্ষা দেয়। অথচ আমরা একে অবজ্ঞা করে পশ্চিমা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছি।


Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post