বাংলাদেশে কি মেধাবীর অভাব? — সমস্যা অন্য জায়গায়

 এক কথায় উত্তর দিলে বলতেই হয় — না, বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই।

তাহলে প্রশ্ন আসে — কেন আমরা এখনও আধুনিক প্রযুক্তি, মিসাইল, ড্রোন, ফাইটার জেট কিংবা পারমাণবিক গবেষণাগার গড়ে তুলতে পারিনি?

এর উত্তরটা খুঁজে নিতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সমাজের চিন্তাধারায়, শিক্ষানীতিতে, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার এবং গবেষণার পরিবেশে।


🇧🇩 মেধার দেশ — কিন্তু সীমাবদ্ধতায় বন্দি

বাংলাদেশ বরাবরই ছিল প্রতিভাবান মানুষের দেশ।
ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত, রাজনীতি, সংগীত, চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বহু ক্ষেত্রে অসাধারণ মেধার প্রকাশ ঘটেছে।
আজও প্রতিবছর হাজার হাজার মেধাবী তরুণ-তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, প্রোগ্রামিং ও রোবোটিক্সে পদক পায় — কিন্তু তাদের অনেকেই একসময় হারিয়ে যায় সিস্টেমের অন্ধকারে।


🎯 সমস্যা কোথায়?

👉 ১. মেধার মানদণ্ড — কেবল বিসিএস?
এ দেশে 'মেধাবী' হওয়ার একমাত্র প্রমাণ যেন বিসিএস পরীক্ষা।
শিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ পর্যন্ত শোনে —
“বাবা, বিসিএস দাও, আগে ক্যাডার হও, পরে যা খুশি করো।”
এই মনোভাব তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে দমিয়ে দেয়।
তারা সৃজনশীলতা নয়, মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে।

👉 ২. গবেষণার প্রতি অবজ্ঞা
বাংলাদেশে গবেষণা মানেই নাকি সময় নষ্ট!
যদি কেউ বলেন, “আমি বিজ্ঞানী হতে চাই”, তখনই সে হয়ে যায় হাসির পাত্র।
আধুনিক ল্যাব, বাজেট, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ কিছুই নেই — আছে কাগজে-কলমে গবেষণা প্রপোজাল আর বছরের পর বছর ফাইল ঘোরানো।

👉 ৩. উদ্ভাবকদের উপহাস
এখানে একজন উদ্ভাবককে ‘পাগল’ বলা হয়, কারণ সে চায় নতুন কিছু বানাতে।
সে যদি বলেন, “আমি বাংলাদেশে ড্রোন তৈরি করতে চাই”, তখন সমাজ তাকে পাগল বলে উপহাস করে।
কিন্তু একসময় এই একই মানুষটাই যদি বিদেশে গিয়ে সফল হয়, তখন আমরা গর্ব করি — “সে তো আমাদের দেশের ছেলে!”


✈️ বিদেশমুখী মেধা: মস্তিষ্কপলনের ভয়াবহতা

যেসব তরুণ নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রযুক্তির জগতে কিছু করতে চায়, তারা যখন দেশে সুযোগ পায় না, তখন বাধ্য হয়েই বিদেশে পাড়ি জমায়।
এই 'Brain Drain' বা মেধা-পলায়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর একটি।

যার হাতে ছিল গবেষণার কলম, সে আজ বিদেশে অন্য দেশের উন্নয়নে কাজ করছে।
আর আমাদের দেশে সে হয়ে গেছে — “একজন হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা”।


📉 ফলাফল: উন্নয়ন নয়, পিছিয়ে পড়া

যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ

  • এআই নিয়ে কাজ করছে,

  • কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে,

  • হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করছে,

  • ড্রোনের মাধ্যমে কৃষি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে —
    তখন আমরা আছি সরকারি টেন্ডার নিয়ে মারামারিতে, দুর্নীতিতে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে।

প্রশ্ন জাগে — আমাদের কী দোষ? আমাদের কি মেধা নেই? না!
আমাদের সমস্যা হলো — আমরা মেধার মূল্যায়ন করি না, শুধু মুখে প্রশংসা করি।


🛠️ সমাধান: মানসিকতার বিপ্লব দরকার

বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে প্রয়োজন চিন্তার পরিবর্তন

✅ গবেষণায় বাজেট বাড়াতে হবে
শুধু সেতু, রাস্তা বা ভবনের পেছনে বাজেট খরচ নয় — গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিজ্ঞানীদের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে।

✅ গবেষকদের সম্মান দিতে হবে
একজন বিজ্ঞানী যেন সরকারি চাকরিজীবীর মতোই সম্মানিত বোধ করেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

✅ শিক্ষা ব্যবস্থায় উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে
বই মুখস্থ নয় — চিন্তা, প্রশ্ন, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা শেখাতে হবে।

✅ তরুণদের উৎসাহ দিতে হবে নতুন কিছু বানাতে
কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি বলে, “আমি রোবট বানাতে চাই” — তাকে বলুন, “চেষ্টা করো, পাশে আছি।”


🌟 উপসংহার: একটি জাতি তখনই উন্নত হয়, যখন সে নিজের মেধাবীদের সম্মান করে

বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই —
অভাব আছে সুযোগের, উৎসাহের, সম্মানের এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার নীতির।

আপনি যদি একটি বীজকে যত্ন না দেন, তবে সে কখনো মহীরুহ হবে না।
তেমনি, আপনি যদি আপনার মেধাবীদের পৃষ্ঠপোষকতা না করেন, তবে তারা কখনো জাতিকে আলোকিত করতে পারবে না।


✅ এখন সময় — চিন্তা বদলানোর, মেধাকে কাজে লাগানোর

যতদিন আমরা মেধাবীদের বিসিএস নয়, গবেষণাগারে পাঠাব না —
ততদিন আমরা বিশ্বদরবারে প্রযুক্তির লড়াইয়ে পিছিয়েই থাকব।

🇧🇩 বাংলাদেশ একদিন পারমাণবিক গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে, আধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করবে — যদি আমরা আজই আমাদের মেধার প্রতি সম্মান দেখাতে শিখি।


#বাংলাদেশ #মেধা #গবেষণা #প্রযুক্তি #উদ্ভাবন #বিসিএস_সামাজিক_চাপ #সিস্টেম_চেঞ্জ #শিক্ষা_সংস্কার

Thanks For Comment we are reply soon as possible.

Previous Post Next Post